জকিগঞ্জে নির্বাচন : জীবনযুদ্ধে জয়ী ফারুক লড়ছেন ভোটযুদ্ধে

ওমর ফারুক, জকিগঞ্জ


জানুয়ারি ২২, ২০২১
০৭:৪৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২২, ২০২১
০৭:৪৮ অপরাহ্ন



জকিগঞ্জে নির্বাচন : জীবনযুদ্ধে জয়ী ফারুক লড়ছেন ভোটযুদ্ধে

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সব মহলেই পরিচ্ছন্ন ইমেজধারী হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রনেতা ফারুক আহমদ জীবনযুদ্ধ জয় করে এখন লড়ছেন ভোটযুদ্ধে। নির্বাচনে ফ্যাক্টর প্রার্থী হিসেবে তার নাম এখন বেশ আলোচিত।

অল্প কয়েকদিন আগে তিনি সিলেটের একটি ক্লিনিকে ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন। পরে রাজধানী ঢাকার বিআরবি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার অসুস্থতার খবরে উপজেলাজুড়ে হতাশার ছায়া দেখা দিয়েছিল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বদলীয় নেতা-কর্মীরা তার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও শিরনি বিতরণ করেন। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ফারুক আহমদ। এর মধ্যেই ঘোষণা হয় জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল। ভোটাররা আগে থেকেই ফারুকের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অবগত ছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে অনেকটা ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চান ফারুক আহমদ। তার সঙ্গে আরও ৫ জন নেতা দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিনের ওপর আস্থা রেখে তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে। এর ফলে ফারুক আহমদ ও উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ বিদ্রোহী প্রার্থী হন।

ফারুক আহমদ ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনেও দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে অল্প ভোটের ব্যবধানে দলীয় প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিনের কাছে হেরে যান। তবে সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখনও বির্তক শেষ হয়নি।

ছাত্রজীবন থেকে ফারুক আহমদ ছিলেন সৎ ও সাহসী ছাত্রলীগ কর্মী। দলের জন্য জেল খেটেছেন একটানা ৫ বছর। অনিয়ম, দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়সহ বার বার অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জেলজীবন ভোগ করেছেন। তার এমন কর্মকাণ্ড উপজেলাজুড়ে ছিল বেশ আলোচিত।

ফারুক আহমদ প্রথমে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক, এরপর জেলে থেকে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, জেলা যুবলীগের সদস্য হয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হন। গতবছর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হন। তার ব্যক্তিগত ইমেজ ভোটের মাঠে বড় প্রভাব ফেলে। ফ্যাক্টর প্রার্থীদের তালিকায় বার বার তার নাম উঠে আসে। এবারও তিনি ফ্যাক্টর প্রার্থীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্য মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ফারুক আহমদ ভোটের মাঠ দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সদ্য সুস্থ হওয়া ফারুক আহমদকে ভোটারগণ প্রচারে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে আবেগে জড়িয়ে ধরছেন। কেউ কেউ আবার কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নাও করতে দেখা যাচ্ছে। আবেগে কাঁদছেন ফারুকও। ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন সাধারণ ভোটারগণ। ভোটের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে আবেগময় এক অন্যরকম পরিবেশ। সবমিলিয়ে এবারের ভোটের মাঠে ফারুক আহমদ এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

পৌর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক মেয়র ইকবাল আহমদ তাপাদার (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী পৌর জাপার সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক (লাঙল), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ (জগ) ও আব্দুল আহাদ (নারিকেল গাছ), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা (চামচ), স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আল ইসলাহ'র সভাপতি হিফজুর রহমান (মোবাইল ফোন) এবং সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম (হ্যাঙ্গার)। তবে পৌরসভায় নানা কারণে এবার প্রতীকের চাইতে ব্যক্তি ইমেজের গুরুত্ব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভোটের হিসাব-নিকাশে বার বার আলোচনায় স্থান পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থী ফারুক আহমদ, আব্দুল আহাদ ও হিফজুর রহমান।

ভোটারদের ধারণা, ক্লিন ইমেজের কারণে ও অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসায় ফারুক আহমদ নির্বাচনী মাঠে বেশ আলোচিত হচ্ছেন। তাছাড়া গতবারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তার ভোটের জোয়ার চোখে পড়ার মতো। তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত শক্ত টক্করে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক দলের বিদ্রোহী আব্দুল আহাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আল ইসলাহ'র সভাপতি হিফজুর রহমান। 

তবে ভোটাররা জানান, নির্বাচনী চিত্রের মেরুকরণ যেকোনো সময় হতে পারে। সবশেষে আলোচনায় আসতে পারেন নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন ও বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আহমদ তাপাদারসহ অন্য প্রার্থীরাও। নানা কারণে অনেক প্রার্থীর ভোট ব্যাংকে ভাঙনের সুর রয়েছে। মেরুকরণ ঘটলে ভোটের হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন হতে পারে বলে ধারণা তাদের।

 

ওএফ/আরআর-০৩