প্রথম ধাপে সিলেট জেলায় আসছে ২৩ হাজার টিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ২৮, ২০২১
০৩:০০ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৮, ২০২১
০৩:০১ অপরাহ্ন



প্রথম ধাপে সিলেট জেলায় আসছে ২৩ হাজার টিকা

ফেব্রুয়ারির শুরুতেই সিলেটে আসছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ভ্যাকসিন। প্রথম ধাপে সিলেট জেলায় আসবে ২২ হাজার ৮০০ করোনার টিকা। টিকা রাখার জন্য সিলেট সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের ইপিআই প্রকল্পের টিকা যে রেফ্রিজারেটরে রাখা হয় সেখানেই করোনা ভ্যাকসিন সংরক্ষণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিলেট জেলা কমিটি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুইটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সদস্য সচিব প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। আর জেলা কমিটির আট সদস্যের কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই সিলেটে করোনার টিকা আসার কথা রয়েছে। 

নগর এলাকায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে চারটি ও সদর হাসপাতাল ও সুবিধাজনক স্থানে আটটি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে থাকবেন দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক। টিকাদান পরবর্তী পর্যবেক্ষণের জন্য সাত সদস্যের মেডিকেল টিম থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। 

এদিকে, টিকা দেওয়ার পর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে তাদের জন্য এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকটি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে অক্সিজেনসহ সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ৩৭ কার্টন ভ্যাকসিন আসবে। প্রতি কার্টনে ১ হাজার ২০০ করে ভ্যাকসিন থাকছে। সেই হিসাবে প্রথম পর্যায়ে ৪৪ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা পাচ্ছে সিলেট বিভাগ। এর মধ্যে সিলেট জেলা পাবে ১৯ কার্টুন, অর্থাৎ ২২ হাজার ৮০০ ভ্যাক্সিন। বাকিগুলো অন্য তিন জেলায় পাঠানো হবে। 

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেট বিভাগের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ৩৭ কার্টন ভ্যাকসিন আসবে। এর মধ্যে সিলেট পাবে ১৯ কার্টন। এক কার্টনে ১২০০ ভায়োল টিকা থাকবে।’

এদিকে, ফেব্রুয়ারিতে টিকা আসার কথা থাকলেও এখনও সিলেটে এ বিষয়ে তেমন প্রচারকাজ চালানো হয়নি। টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে। ফলে প্রচার করা জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। 

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই প্রচারকাজ শুরু করা হবে। ডকুমেন্টারি, শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে টিকার বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে সরকার।’ 

জনগণের সংশয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টিকা নিয়ে অপ্রপ্রচার চলার কারণে অনেকেই শঙ্কিত।’ এ বিষয়ে শঙ্কিত না হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নরওয়েতে যারা মারা গেছেন তারা কেউ করোনার টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মারা যাননি। কিন্তু এটাই প্রচার করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বয়োজেষ্ঠ আছেন যাদের নানা শারীরিক জটিলতা থাকতে পারে। টিকা নেওয়ার পর তারা কেউ যদি অন্য রোগেও মারা যান তাহলে হয়ত ভাবা হবে টিকার কারণেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়।’

যাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু সিট প্রস্তুত রাখছি। টিকা নেওয়ার পর কারও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এসব বেডে অক্সিজেনসহ সব ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া প্রতিটি টিকাকেন্দ্রে মেডিকেল টিম থাকবে।’

জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান ও কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে টিকা পাওয়া ১৫ ক্যাটাগরির লোকেরা হলেন, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, মরদেহ সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। 

এ বিষয়ে ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম ধাপে যারা টিকা নেবেন তাদের তালিকা প্রায় প্রস্তুত। এ তালিকা ঢাকায় পাঠাব। যারা টিকা নেবেন সেখান থেকে তাদের কাছে এসএমএস আসবে। কবে কোথায় তারা টিকা গ্রহণ করবেন সেটাও জানিয়ে দেওয়া হবে।’

এনএইচ/বিএ-০৪