ধর্মপাশায় মৎস্যজীবী হত্যা : আরেক আসামি গ্রেপ্তার

ধর্মপাশা প্রতিনিধি


জানুয়ারি ৩০, ২০২১
০২:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩০, ২০২১
০২:০৪ পূর্বাহ্ন



ধর্মপাশায় মৎস্যজীবী হত্যা : আরেক আসামি গ্রেপ্তার

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহালে মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণকে (৬৫) গলাকেটে হত্যা, জলমহালের খলাঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ধীরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ধর্মপাশা থানার পুলিশ। তার বাড়ি উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সানুয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

ধর্মপাশা থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহালটি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন। ১৪২২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় ৬ বছরের জন্য এটি ইজারা পায় উপজেলার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। যথারীতি সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণ (৩০) জলমহালটির ইজারামূল্য পরিশোধ করেন। জলমহালটির পাড়ে ওই সমিতির সদস্যরা খলাঘরসহ ৫টি ঘর তৈরি করে জলমহালটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিলেন। নিজেকে ওই সমিতির সভাপতি দাবি করে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের অনুসারী সুবল বর্মণ (৩৫) সুনই জলমহালটির ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ইজারামূল্য সরকারি কোষাগারে জমা দেন। তিনমাস আগে সুবল বর্মণ জলমহালটির পাড়ে দু'টি খলাঘর তৈরি করে সেখানে ১৫-২০ জন লোককে নিয়ে বসবাস করে জলমহালটি রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করেন।

গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান রোকনের অনুসারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুনই জলমহালে গিয়ে চন্দন বর্মণদের খলাঘরে হামলা চালিয়ে সেখানকার একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সেখানে থাকা ১৫-২০ মন জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সমিতির ১৫-২০ জনকে মারধর করা হয়। এতে বাধা দিলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য শ্যামাচরণ বর্মণকে গলাকেটে হ্ত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ওই রাতেই ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু দুইজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ২১ জনকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে  আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের ছেলে চন্দন বর্মণ বাদী হয়ে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে ধর্মপাশা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে আসামি করায় পুলিশ অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি।

তবে পুলিশের দাবি, সাংসদ ও  উপজেলা চেয়ারম্যানকে এই মামলায় আসামি করায় নয়, বরং নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ ও তার লোকজন আবেদনটি সংশোধন করে পরে জমা দেওয়ার কথা বলে ওসির কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে আর সেটি জমা দেননি। এ অবস্থায় পরদিন ১০ জানুয়ারি ধর্মপাশা থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬০--৬৫ জনকে আসামি করে ধর্মপাশা থানায় একটি মামলা করেন।  

ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজ শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বলেন, সুনই জলমহালে মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণকে গলাকেটে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এই মামলায় ধীরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি ধীরেন্দ্রকে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

এসএ/আরআর-০৮