'সরকার দেখে না', অবশেষে নিজেরাই করলেন সড়ক সংস্কার

শামীম আহমেদ, ধর্মপাশা


জানুয়ারি ৩১, ২০২১
০২:০৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ৩১, ২০২১
১১:৩৬ অপরাহ্ন



'সরকার দেখে না', অবশেষে নিজেরাই করলেন সড়ক সংস্কার

আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজের জন্য ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গ্রামবাসী বার বার দাবি জানিয়ে এলেও কোনো কাজ হচ্ছিল না। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কাজটি করার জন্য বেশ কয়েকবার আশ্বাস পান গ্রামবাসী। কিন্তু কাজের কোনো খবর হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের প্রতি চরম বিরক্ত হয়ে অবশেষে সরকারি বরাদ্দের দিকে না থাকিয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই চাঁদা উঠিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজে হাত দেন। 

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় এই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে তা গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজটি করেছেন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামবাসী। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এই ইউনিয়নের কাকিয়াম ও মামুদপুর গ্রামের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ ২ হাজারেরও বেশি মানুষজনকে বর্ষাকালে চলাচল করতে গিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভাগ পোহাতে হচ্ছিল। সড়ক সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করতে পেরে মামুদপুর গ্রামবাসীর মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ-উল্লাস বিরাজ করছে।   

এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের সামনে থেকে শুরু করে একই ইউনিয়নের কাকিয়াম গ্রামের সামনের সড়ক পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব আধা কিলোমিটার। প্রায় দেড়যুগ আগে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। ১০/১২বছর ধরে বর্ষাকালে এই সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। সেই সময়ে নৌকাযোগে এখানকার মানুষজন ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের চলাফেরা করতে হচ্ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সভা করেন মামুদপুর গ্রামবাসী। পরে তারা মিলেমিশে গ্রামের শতাধিক স্বচ্ছল পরিবারের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সড়কটির উপর মাটি ফেলে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করা হয় এবং গত ২৮ জানুয়ারি তা শেষ হয়।

মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সড়কটির সংস্কার কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা সরকারি চাকরিজীবী আবু তাহের বলেন, 'স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য গ্রামবাসী একাধিকবার গেলেও এ ব্যাপারে তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন না। বিষয়টি আমার কানে চলে আসার পর গ্রামবাসীকে সমবেত করে প্রথমে তাদের নিয়ে সভা করি। পরে গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তোলে চাঁদার টাকায় সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি নিজে এই সড়ক সংস্কার কাজের জন্য ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'সরকারি চাকরি করার সুবাদে আমি ঢাকায় থাকি। নিয়মিত এলাকায় থাকা হয় না। তবে ভবিষ্যতে গ্রামবাসীকে সমবেত করে স্থানীয়ভাবে এলাকার ছোট ছোট সমস্যাগুলো সমাধান করার ইচ্ছা আমার রয়েছে।'

মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক লতু মিয়া (৪০) বলেন, 'আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে সড়কটার কামের লাইগ্যা মেলাবার গেছি। যাইয়া কুনু কাম অয় নাই। এ অবস্থায় ১০/১২ বছর ধইরা খুব কষ্টের মধ্যে চলাফিরা করতে অইতেছিল। নিরুফায় অইয়া গ্রামের শতাধিক পরিবারের লোকজন নিজেরাই টেহা দিয়া সড়হের কাম ধরছি। অহন আমরা হারাবছর হাট-বাজারে যাইতে ফারমু, ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাইতে ফারব।'

সেলবরষ ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, 'সরকারি বরাদ্দের অভাবে এই সড়কটির সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি। সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখানকার আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষজনের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হলো।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, 'মামুদপুর গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা তোলে সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার  উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শুধু সরকারি বরাদ্দের দিকে না তাকিয়ে গ্রামবাসী সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে অনেক উন্নয়ন কাজ নিজেরাই করা সম্ভব। গ্রামবাসী সমবেত হয়ে এ কাজটি সম্পন্ন করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিষয়টি অন্যদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।'

 

এসএ/আরআর-০৮