সু চি কোথায় কেউ জানে না!

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
০৮:৩৭ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১
০৮:৩৭ অপরাহ্ন



সু চি কোথায় কেউ জানে না!

মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও জানা যায়নি দেশটির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি কোথায়।তার সঙ্গে আটক অন্য নেতাদেরও খোঁজ মিলছে না। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তারা কোথায় আছেন, বলতে পারছেন না দেশটির গণমাধ্যমগুলো।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সু চি কোথায়, কোনো খোঁজ নেই। খবর পাওয়া যাচ্ছে না তার সঙ্গে আটক অপর নেতাদেরও। এদিকে গতকাল সোমবার দেশটির ২৪ জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে সামরিক সরকার। মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে।

সু চি ও তার দলের নেতাদের খোঁজ না মেলায় এক ধরণের উদ্বেগ জন্মেছে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। গতকাল সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। পরে তার সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে এক বছরের জন্য গোটা দেশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। আটক করা হয় প্রেসিডেন্ট উইন মিন্থ, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চিসহ ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) বহু জ্যেষ্ঠ নেতাকে।

গতকাল ভোরে অভ্যুত্থান ঘোষণার পর পরই তাদের বাড়ি থেকে তুলে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। আটককৃত অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন এনএলডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান থার মিন্থ, উ নিয়ান উইন, মুখপাত্র উ অং শিন, ইয়াঙ্গুন বিভাগের মুখ্যমন্ত্রী পিয় মিন থিয়েন, কারেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নান থিন থয়ে মিন্থ। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতাসহ প্রথম সারির আরও কয়েকজন রাজনীতিকের খোঁজ মিলছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তারাও সেনাবাহিনীর হাতে আটক রয়েছেন। ইতোমধ্যে গোটা মিয়ানমারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেডিও, টেলিভিশন সম্প্রচার। রাজধানী নেপিদোসহ বড় বড় শহরে বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। নেপিদো এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গুনে বন্ধ রয়েছে বিমানবন্দর। শহর দুটির আশপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগও। রাস্তায় রাস্তায় চলছে সেনাদের কড়া টহল। রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে সামরিক বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত ট্রাক, ট্যাংক এবং আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। পার্লামেন্ট সদস্যদের বাসভবনের বাইরে বসানো হয়েছে কড়া প্রহরা।

মিয়ানমারে এমন একদিন এই সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটল, যেদিন দেশটিতে নতুন পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর কথা ছিল। গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল সু চির দল এনএলডি।

নিউ লাইটস অব মিয়ানমার, দি ইরাবতি, বিবিসি, রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, গতকাল সকালে দেশটির সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন টেলিভিশন মিয়াওয়াদ্দিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, নির্বাচনে জালিয়াতির পর বেসামরিক সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সার্বভৌমত্ব ও বিভাজন রুখতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট মিন্থ, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চিসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতাদের। আপাতত জেনারেল মিয়ন্থ সোয়েকে দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা থাকবে সেনাপ্রধানের হাতে। ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ ধারা অনুযায়ী এই জরুরি অবস্থা আগামী এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

ইতোমধ্যেই সামরিক শাসন জারির কারণে গোটা মিয়ানমারে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অজানা আতঙ্কে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার হিড়িক পড়েছে সর্বত্র। অনেকে ব্যাংকগুলো থেকে তাড়াহুড়ো করে টাকা তুলে নেন। অতিরিক্ত চাপের কারণে পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ব্যাংকের কার্যক্রম। এর মধ্যেই মিয়ানমারের জনগণকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন সু চি। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, গতকালই ক্ষমতাসীন এনএলডির ফেসবুক পেজে সু চির পক্ষে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, এই সামরিক অভ্যুত্থান জনগণের মেনে নেওয়া উচিত নয় এবং এর বিরুদ্ধে অবশ্যই বিক্ষোভ করতে হবে। তবে বিবৃতিতে সু চির কোনো স্বাক্ষর ছিল না। বিবৃতির নিচে এনএলডির চেয়ারম্যান উইন তিনের হাতে লেখা একটি নোট রয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন, এই বিবৃতি সু চির ইচ্ছার প্রতিফলন। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমি কসম করে বলছি, সু চি নিজে জনগণের প্রতি এই আহ্বান জানাচ্ছেন।

একই বিষয়ে রয়টার্সকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনএলডি মুখপাত্র মিয়ো নিউন্থ বলেন, আমি জনগণকে বলতে চাই, এত জলদি প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। আমরা চাই আপনারা আইন অনুযায়ী কাজ করুন। যে কোনো সময় নিউন্থ নিজেও আটক হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এদিকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল ও সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমারের জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে দেশটির সামরিক নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত চীন বলেছে, গোটা পরিস্থিতির দিকে তারা লক্ষ রাখছে। চীন আশা করছে, মিয়ানমারের সব পক্ষ সংবিধান ও আইনি কাঠামোর অধীনে যথাযথভাবে তাদের পার্থক্যগুলো সামাল দিতে পারবে এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

 

এএফ/০৪