বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
০৩:১১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
০৩:১১ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের মান্নানঘাট-গজারিয়া সড়কে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলা সদরে যাতায়াতের অন্যতম এই সড়কের বেশ কয়েকটি অংশে ভয়ংকর ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। গেল বর্ষার উপর্যুপরি বন্যা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি। এতে করে পথে পথে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ। শুকনো মৌসুমে বিকল্প রাস্তায় কোনোরকম চলাচল করতে পারলেও পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তির মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পথচারীরা। তাই অনতিবিলম্বে এ সড়ক সংস্কার ও মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জামালগঞ্জ সদর ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নজুড়ে বিস্তৃত এ সড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মান্নানঘাট থেকে গজারিয়ামুখী সড়কের সেলিমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন অংশ ভয়ংকর ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভূকম্পনে সুরম্য অট্টালিকা যেভাবে ধসে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে থাকে, এ সড়কটির অবস্থা অনেকটা সেরকম। ভাঙা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আছে পাকা সড়কের অবশিষ্ট অংশ। পায়ে হেঁটে পাশের বিকল্প সরু রাস্তা দিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ। এছাড়া সেলিমগঞ্জ থেকে গজারিয়া যেতে রামপুর ও জামলাবাজ সড়কের আরও ৪-৫টি অংশ ভেঙে বড় বড় খালে পরিণত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া সড়কের কোনো পাকা অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে, আবার কোনো জায়গার পাকা অংশ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সড়কের ভেঙে যাওয়া এসব স্থানে এসে যাত্রীরা যান থেকে নেমে অন্যত্র ঘুরে ভাঙা অংশ পার হচ্ছেন। এ দুর্ভোগ লাঘবে যত দ্রুত সম্ভব সড়কের কাজ শুরু করার জোর দাবি জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, মান্নানঘাট-গজারিয়া সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। উপজেলা সদরসহ জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা এ সড়ক দিয়ে জামালগঞ্জ সদর ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের কালাগুজা, কাশিপুর, শরীফপুর, সৈয়দনগর, বাহাদুরপুর, শান্তিপুর, ফেনারবাঁক, সেলিমগঞ্জ, ভূতিয়ারপুর, সুজাতপুর, রামপুর, জামলাবাজ, জলিলপুর, গজারিয়া, কামদরপুর, আলীপুর, মোড়লপুর, আমানীপুর, করুণাপুর, বিষ্ণুপুর, নিধিপুর, রাজেন্দ্রপুর, তায়েবনগর, আব্দুল্লাহপুর, যশমন্তপুর, শ্রীমন্তপুর, কৃষ্ণপুর, শুকদেবপুরসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের স্থানে স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীরা।
এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করা ফেনারবাঁক ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের মোটরসাইকেলচালক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, 'এই সড়কে যাতায়াত করলে বুঝতে পারবেন কেমন কষ্ট হয়। গাড়ি চালাতে গিয়া কতটুকু কষ্ট হয় মুখে বুঝিয়ে বলা যাবে না। রাস্তার জরুরিভাবে কাজ করা দরকার।'
একই গ্রামের মোটরসাইকেলচালক মো. কালা মিয়া বলেন, 'সেলিমগঞ্জ থাইক্যা গজারিয়া পর্যন্ত ৬-৭টা ভাঙা আছে। গত বন্যা ভাইঙা লইয়া গেছে সড়ক। এখন এই সড়কে চলাচল করতে মারাত্মক সমস্যা অয়। ভাঙায় গিয়া যাত্রী লামাইয়া সাইডে দিয়া লইয়া যাইতে অয়। এতে কইরা ড্রাইভার ও যাত্রীরার খুব কষ্ট অয়। তেল খরচও বেশি হয়। রাস্তাটা তাড়াতাড়ি ঠিক না করলে যাত্রী-চালক সবার কষ্টই দিন দিন বাড়ব।'
জামলাবাজ গ্রামের মো. শহীদ মিয়া বলেন, 'আমাদের বাড়ির কাছেই বড় বড় তিনটা ভাঙা। এ সড়কে চলাচল করতে জনগণের যে অসুবিধা হয় সেটা কেউ না দেখলে বুঝতে পারবেন না। এখন পর্যন্ত এই ভাঙা সড়কের কোনো কাজ হয়নি। পানি আসার আগে কাজ হওয়াটা জরুরি।'
রামপুর গ্রামের আবুল কাসেম বলেন, 'এই সড়কের অবস্থা একেবারে বেশি খারাপ। একটা রোগী নিয়া যাওন কিংবা সুবিধা-অসুবিধায় চলাচল করাটা এখন খুব কষ্টকর হইয়া দাঁড়াইছে। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। বর্ষা আসার আগেই এ সড়কের কাজ করা হান্ড্রেট পার্সেন্ট দরকার।'
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, এ সড়কের কাজ করতে ইমার্জেন্সি মেইন্টেনেন্সের জন্য পাঠানো হয়েছে। মেইন্টেনেন্স এখনও আসেনি। তবে একটা প্রকল্পের দুই কিলোমিটার রাস্তা এসেছে। এখন ইস্টিমেট পাঠানো হবে। এটা পাস হয়ে এলে পরে টেন্ডার হবে। তারপর কাজ শুরু হবে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, 'দেড় কিলোমিটার কাজ এসেছে। এই দেড় কিলোমিটার কাজে আমরা ইস্টিমেট করব। ইস্টিমেট করে আগামী অর্থবছরে অর্থাৎ পানি চলে গেলে পরবর্তীতে করতে পারব। হাওরের বাস্তবতায় তিন বা চারমাস কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ চারমাসের মধ্যে এই কাজ করা সম্ভব নয়।'
বিআর/আরআর-১০