ধর্মপাশা প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
০৭:২১ অপরাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
০৭:২১ অপরাহ্ন
বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলারের গুদামে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে এমওপি সার বিক্রি করার প্রতিবাদ করায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্র্রামের কৃষক বিজয় সরকারের (৫০) সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও একই ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক প্রণব সরকার (৫৫)কে মারধর করা হয়েছে। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে উপজেলার মধ্যনগর বাজারে মধ্যনগর ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মন্তোষ চন্দ্র দের সারের গুদামে ডিলারের ব্যবসায়িক পার্টনার শ্যামল রায় (৫০) এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকার কৃষকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী কৃষক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যনগর মধ্যবাজারে মধ্যনগর ইউনিয়নের বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মন্তোষ চন্দ্র দের একটি সারের গুদাম রয়েছে। ডিলারের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এই সারের ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছেন উপজেলার মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা শ্যামল রায় (৫০)। সপ্তাহ খানেক ধরে ডিলারের ব্যবসায়িক পার্টনার শ্যামল রায় ডিলারের গুদাম থেকে সার নিতে আসা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ৫০কেজি ওজনের প্রতি বস্তা এমওপি সার ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করে আসছেন। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে ওই গুদামে অবস্থান করছিলেন মধ্যনগর ইউনিয়নের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.কবীর হোসেন। এ সময় মধ্যনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের কৃষক বিজয় সরকার ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা এমওপি সার কিনতে ওই গুদামে আসেন। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শ্যামল রায় ওই কৃষকের কাছে প্রতি ৫০ কেজি এমওপি সার ৮০০ টাকা দাম চান। এমওপি সারের দাম বেশি চাওয়ায় এ নিয়ে শ্যামল রায়ের সঙ্গে কৃষক বিজয় সরকারের কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তিনি ওই কৃষককে ধাক্কা মারতে মারতে সারের গুদাম থেকে বের করে দেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন একই ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক প্রণব সরকার। ধাক্কা মেরে কৃষককে বের করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শ্যামল রায় উত্তেজিত হয়ে তাঁদের গুদামের এক কর্মচারীকে নিয়ে কৃষক প্রণবকে এলোপাতাড়ি কিল ও লাথি মারতে থাকলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে ওই কৃষককে রক্ষা করেন।
ভুক্তভোগী কৃষক প্রণব সরকার ও বিজয় সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা না মেনে ডিলার মন্তোষ চন্দ্র দের পার্টনার শ্যামল রায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবস্তা এমওপি সার ৭৫০টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করে আসছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমাদের সঙ্গে শ্যামল রায় শুধু অশুভনী আচরণই করেননি, গুদামের একজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে মারধর পর্যন্ত করেছেন। আমরা এ ঘটনার সুবিচার চেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ঘটনাটি মুঠোফোনে জানিয়েছি।
মধ্যনগর ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মো.কবীর হোসেন বলেন, সরকারি নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে এমওপি সারের দাম কিছুটা বেশি চেয়েছিলেন শ্যামল রায়। পরে বিষয়টি আমি মিটমমাট করে দিয়েছি। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে তিনি কৃষকদের কাছে এমওপিসহ অন্যান্য সার বিক্রি করে আসছেন। মারধরের ঘটনাটি আমি জানি না। আমি যাবতীয় বিষয়গুলো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছি।
মায়া ট্রেডার্সের ডিলার মন্তোষ চন্দ্র দের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি । তবে ডিলারের পার্টনার শ্যামল রায় তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নির্ধারিত মুল্যেই কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছি। কোনো কৃষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারধরের ঘটনা ঘটেনি । এ গুলো অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দুজন কৃষকের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা ঘটেছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। ররিবার সরোজমিনে আমি ঘটনাস্থলে যাব। যে ঘটনা ঘটেছে তার সত্যতা পাওয়া গেলে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএ/বিএ-২১