সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার
মার্চ ২৫, ২০২১
১০:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৭, ২০২১
০১:০৩ পূর্বাহ্ন
সূর্য যেদিকে যায়, ফুলও সেদিকে যায়। তাই এর নাম সূর্যমুখী। সূর্যমুখী মানেই চারিদিকে সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরও লাবন্যময়, যা দেখে চোখ ফেরাতে মন চায় না। এজন্যই সূর্যমুখী ফুল দেখতে ভিড় জমান মানুষজন। এমন দৃশ্য দেখা গেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকার সূর্যমুখী বাগানে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ৫শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। ৩টি ভ্যারাইটি হাইসান-৩৩, হাইসান-৩৬ ও নতুন বীজ আরডিএস-৭৫ হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী চাষ হয়েছে জেলার ৭টি উপজেলায়। গতবছর যেখানে জেলাজুড়ে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল মাত্র ৫৮ হেক্টর জমিতে, সেখানে এ বছর এর ১০ গুনের বেশি জায়গায় সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।
সাংবাদিকতার পাশাপশি সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরু গ্রামে ৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ভ্রাতৃদ্বয় সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিন ও এস এম উমেদ আলী। এছাড়া সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আরিফুল ইসলাম ২ একর এবং আব্দুল বাতেন ও গোবিন্দ সূত্রধর ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিন বলেন, 'আগে অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান তোলার পর এই জমিগুলো পতিত থাকত। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা গতবছর থেকে সূর্যমুখী চাষ করছি। আমাদের এই সূর্যমুখী দেখতে অনেক মানুষ আসছেন। দেখে তারা উৎসাহ বোধ করছেন। তারা নিজেরাও সূর্যমুখী চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'বাজারে যে ভোজ্যতেল পাওয়া যায় সেটি মানসম্মত নয়। বরং সূর্যমুখীর তেল অনেক ভালো। আমাদের যা প্রয়োজন তা রেখে অতিরিক্ত বীজ বাজারে বিক্রি করে দেব।'
এস এম উমেদ আলী বলেন, 'গতবছর বীজের মূল্য কম ছিল। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজের মূল্য ছিল ৫০-৫২ টাকা। কিন্তু এ বছর ৯০-১০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ রকম থাকলে আশা করি সঠিক মূল্য পাব।'
তিনি বলেন, 'এটি কোলেস্টেরলমুক্ত। সূর্যমুখী দিয়ে উন্নতমানের তেল হয়। আমাদের সূর্যমুখী বাগানে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এটি চাষের জন্য। তারা আমাদের কাছ থেকে এবং কৃষি অধিদপ্তরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। তেল জাতীয় সরিষা, সূর্যমুখী, বাদামের মেশিন কৃষি ভর্তুকির আওতায় ক্ষুদ্রভাবে গ্রামে গ্রামে স্থাপন করা গেলে আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেল অনেকটা কমে আসবে।'
এদিকে, এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির বুকে দেখা গেছে বিশাল হলদে ফুলের রাজ্য। গাছে গাছে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের বাগানের মাধ্যমে প্রকৃতি যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে, যেখানে সাময়িক সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে মন চায়। সূর্যমুখীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন পর্যটকরা ভিড় করছেন হাকালুকিতে।
হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, 'পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যিই অসাধারণ। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা পুরো পরিবার হাকালুকি হাওরে এসেছি।'
প্রথমবারের মতো হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখী চাষ করা রুবেল মিয়া বলেন, 'আমি ও আমার চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন মিলে প্রায় ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। আগামীতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরও সম্প্রসারণ করব।'
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. ফরহাদুল হক বলেন, 'এবার ফসল অনেক ভালো হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যাবে। প্রতি হেক্টরে ২ টন বা প্রতি বিঘায় ৮ মন সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যাবে। এতে স্থানীয় চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। এই সূর্যমুখী বীজ কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করতে পারবেন।'
তিনি জানান, ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। হাইসান জাতের ভ্যারাইটি লম্বা হয় এবং ফলনের হার ৪২-৪৩ শতাংশ। আর নতুন ভ্যারাইটি আরডিএস-৭৫ খাটো জাতের। এই গাছে একাধিক ফুল হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, 'আমাদের ভোজ্যতেলের যে চাহিদা, সেই চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল আমাদানি করতে হয়। আমরা সয়াবিন নির্ভর। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব তেল, সরিষা এবং সূর্যমুখীর নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কর্মসূচি নিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'কৃষক ভাইয়েরা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং তারা উৎসাহ বোধ করছেন। অনেকেই বলছেন তারা আরও বেশি জায়গায় এই সূর্যমুখী ও সরিষা চাষ করবেন।'
এসএইচ/আরআর-০১