আলী আহমদ, জগন্নাথপুর
এপ্রিল ০১, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০১, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
প্রচন্ড খরায় ফসলি জমি ফেটে যাচ্ছিল। রোদে জ্বলে লালচে হয়ে যাচ্ছিল সবুজ চারা। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য চলছিল হাহাকার। অবশেষে গত সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক ও স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার হাসিমুখে এসব কথা বলছিলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের ভুরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান। বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি হওয়াতে অবশ্য ভয়ে তার বুক কেঁপে উঠেছিল। তবে সামন্য শিলা হওয়ায় ফসলের ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বৃষ্টির জন্য মাসখানেক ধরে কৃষকের মধ্যে হাহাকার চলছিল। কারণ বোরো ফসলের চারা থেকে ধান বের হওয়ার সময় এখন। আর এজন্য বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিতে তাই কৃষকরা খুশি। আশা করছি, সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে ধান পেকে যাবে।' এবার নলুয়া হাওরে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন বলে জানান।
বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক সাইদুর রহমানের মতো আনন্দে ভাসছে জগন্নাথপুরের লাখো কৃষক পরিবার। স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলার কৃষকরা বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এখন বোরোর সবুজ চারা থেকে ধান বের হওয়ার উপযুক্ত সময়। বৃষ্টি না হওয়ায় খরায় অনেক সবুজ চারা লালচে হয়ে যাচ্ছিল। প্রায় মাসখানেক ধরে বৃষ্টির জন্য কৃষকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে দেখা মিলেছে সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির। এতে কৃষকরা খুশি।
এদিকে বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরলেও ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। গতরাতের বৃষ্টিতে নলুয়া হাওরের পোল্ডার-২ এর ২৯ নম্বর প্রকল্পের ইসমাইলচক এলাকায় কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলার হাওর বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'বৃষ্টিতে কৃষকের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও বালু–মাটি দিয়ে কাজ করা হয়েছে যেসব বাঁধে, সেসব প্রকল্পের কিছু কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, 'বৃষ্টি হওয়ার পর যেসব বাঁধে কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে, সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। হাওর ঘুরে বড় ধরনের কোনো ফাটল কিংবা ধসের ঘটনা চোখে পড়েনি।'
বোরো ধানের জন্য এই মুহূর্তে বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার। তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন ছিল। এই বৃষ্টির ফলে চারা থেকে ধান বের হবে। এবার জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।'
জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, 'এবার জগন্নাথপুরে ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সার্বিক অগ্রগতি সন্তোষজনক। বৃষ্টি বোরো ধান ও বাঁধের জন্য ভালো হয়েছে। এতে বাঁধের মাটি শক্ত হয়ে বসবে। বৃষ্টিতে বাঁধের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।'
এএ/আরআর-০৬