শাল্লায় হামলা : আতঙ্কে ঝুমনের মা, বোন ও স্ত্রী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


এপ্রিল ০৩, ২০২১
০৭:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৩, ২০২১
০৭:১৬ অপরাহ্ন



শাল্লায় হামলা : আতঙ্কে ঝুমনের মা, বোন ও স্ত্রী

সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের গ্রাম নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন গত ১৬ মার্চ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ব্যক্তিগত বিরোধীতা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় ১৭ মার্চ সকালে হামলা হয়েছিল গ্রামে। হামলায় গ্রামের ৯১টি ঘর তছনছ করেছিল হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট হয়েছে সবগুলো ঘরবাড়িতে। আহত হয়েছেন ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস।

ঘটনার পর থেকে সুইটি তার স্বামীর জীবনের বিপন্নতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক পাঠানো প্রতিনিধিদলের কাছেও তিনি নিজের স্বামীর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ঝুমনের মা নিভা রাণী দাস গত ২৫ মার্চ শাল্লা থানায় হামলাকারী ৭২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও মামলাটি নেয়নি পুলিশ। বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আর যে ফেসবুক পোস্ট নিয়ে হামলা হয়েছে, সেই পোস্ট ঝুমন দাস দেননি বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

গত ১৫ মার্চ হেফাজতে ইসলামের নেতা বাবুনগরী ও মামুনুল হক দিরাইয়ে সমাবেশে আসেন। সমাবেশে তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধীতার পাশাপাশি হিন্দুদের সমালোচনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পোস্ট দেন। ওই পোস্টের জের ধরে ১৬ মার্চ ও ১৭ মার্চ দিরাই উপজেলার নাচনী, চন্ডিপুর, ধনপুর, সরমঙ্গল, সন্তোষপুর এবং শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের হেফাজত অনুসারী ইমাম-মোয়াজ্জিনরা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে গ্রামগুলোর মসজিদের মাইকে আন্দোলনের আহ্বান জানান। এতে উৎসাহিত হয়ে সাধারণ মানুষজন ১৭ মার্চ সকালে গ্রামে গিয়ে হামলা চালায় ও লুটপাট করে। হামলাকারীরা ওইদিন ঝুমন দাসের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি তার স্ত্রীকে মারধর করে। এর আগে ১৬ মার্চ রাতে গ্রামবাসী ঝুমনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। কিন্তু পরদিন গ্রামে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। ঝুমন গত ১৬ মার্চ থেকে জেল হাজতে রয়েছেন।

ঝুমন দাসের মা নিভা রাণী দাস ইতোমধ্যে তার ছেলের মুক্তি ও নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। ঝুমনের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের কাছে স্বামীর নিরাপত্তা চেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন তার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পেলে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে।

ঝুমন দাসের বোন উর্বশী দাস মনি বলেন, 'আমি কলেজে অধ্যয়ন করি। আমার ভেতরে ভয় কাজ করছে। ঝুমনের বোন বলে তারা যদি আমাকে কলেজে যাওয়ার সময় বিরক্ত করে! তাছাড়া আমার ভাইয়ের জীবন নিয়েও আমরা শঙ্কিত। আমরা পরিবারের নিরাপত্তা চাই।'

ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস বলেন, 'আমার স্বামী এখন জেল হাজতে। তিনি মুক্ত হলে তারা তার ক্ষতি করতে পারে। আমরা তার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার জীবনের নিরাপত্তা ও আমাদের নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলকেও আমি বলেছি।'

ঝুমন দাসের মা নিভা রাণী দাস বলেন, 'আমার মামলা নেয়নি পুলিশ। তাই আমি আদালতে মামলা দিয়েছি। আমার পুরো পরিবার এখন উদ্বিগ্ন। আমার ছেলে বলেছে ফেসবুকের যে পোস্ট নিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে ওই পোস্ট সে দেয়নি।'

শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, 'গ্রামবাসীর নিরাপত্তার জন্য গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। তাছাড়া এ ঘটনার পর গ্রামের প্রতি পুলিশ ও প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে। গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।'

 

এসএস/আরআর-০১