কুলাউড়ায় হুমকির মুখে ১৫টি সেতু

জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া


এপ্রিল ০৬, ২০২১
০৭:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৬, ২০২১
০৭:৫৩ অপরাহ্ন



কুলাউড়ায় হুমকির মুখে ১৫টি সেতু

দেবে যাওয়া হাসিমপুর সেতু।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ফানাই নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অপরিকল্পিত খননকাজের ফলে রাউৎগাঁও, কর্মধা, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ও কুলাউড়া সদর এই ৫টি ইউনিয়নের ১৫টি সেতু হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো সময় সেতুগুলো ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে ৪-৫টি সেতু দেবে গেছে।

সরেজমিনে এসব এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, ফানাই নদীর উপর রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কবিরাজী গুতগুতি রাস্তার পার্শ্ববর্তী ধলা মিয়ার বাড়ির পাশের সেতু, চৌধুরীবাজার-কর্মধা-মুকুন্দপুর রাস্তায় খাতুন বিবির বাড়ির পাশের সেতু ও কর্মধা ইউনিয়নের হাসিমপুর রাঙ্গিছড়া রাস্তায় গেন্দুর বাড়ির পাশের সেতু দেবে গেছে। এছাড়া পূর্ব বাবনিয়া থেকে রাঙ্গিছড়ার রাস্তায় থাকা সেতু এবং হুসনাবাদ হয়ে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার উপর সেতু যেকোনো সময় ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। মুকুন্দপুর-পালগ্রাম রাস্তায় কুরফান উল্লাহ'র বাড়ির পাশের সেতু, কুলাউড়া-রবিরবাজার সড়কের বেইলি সেতু, ভাটুত গ্রামের রেললাইনের উপরে থাকা রেলসেতু, ভবানীপুর-নর্তন রাস্তায় কাজল চৌধুরীর বাড়ির পাশের নদীর উপরের সেতুও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুর মধ্যখানের পিলার দেবে যাচ্ছে। শূন্যে রয়েছে পিলারগুলো। ভবানীপুর-হেলালপুর রাস্তার মাসুক মিয়ার বাড়ির পাশের নদীর উপর গতবছর ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি নদী খননের ফলে নদীর মধ্যখানে পড়ে রয়েছে। ফলে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ সেতু।

এছাড়া ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের পাটনী বাড়ির পাশের ফুট সেতু, কাদিপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের মনোরঞ্জনের বাড়ির পাশের নদীর উপরের সেতু ও মিনার মহল দাড়ার মুখের সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি সরকারিভাবে ফানাই নদীর খনন কাজ শুরু হলে ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এই ৩টি সেতু মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। শ্রমিকরা মাটি কাটার মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ফানাই নদী খনন করতে গিয়ে নদীর মধ্যখানে সেতুর পিলারের নীচ থেকে মাটি খনন করায় পিলারের নীচ থেকে মাটি সরে যায়। সেতুর পিলারের উভয়দিক থেকে প্রায় ৩ ফুট মাটিশূন্য হয়ে পড়ে। যার ফলে সেতুর মধ্যখান দেবে গিয়ে বাঁকা হয়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এই সেতুগুলো। সেতুগুলো দিয়ে মানুষ ও যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এই সেতুগুলো নতুনভাবে নির্মাণ খুবই জরুরি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মুহিব আহমেদ জানান, ফানাই নদী খনন করায় সেতুর পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে। 

বাবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক শিক্ষক আব্দুল মালিক জানান, ফানাই নদী সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় সেতুগুলোর এ অবস্থা হয়েছে। যেকোনো সময় সেতু ভেঙে পড়বে। আর এই সেতুগুলো ভেঙে পড়লে স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতের বিকল্প কোনো রাস্তাও নেই। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ফানাই নদী খনন শুরুর আগে সঠিকভাবে খননের জন্য কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী বরাবরে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষিত থেকে যায়।

রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সেতুগুলো প্রায় ৬০ ফুট লম্বা। প্রতিদিন এসব সেতু দিয়ে ভারী যানবাহনসহ স্থানীয় লোকজন যাতায়াত করে থাকেন।

কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম আতিকুর রহমান আতিক জানান, রাঙ্গীছড়া থেকে হাসিমপুর সড়কে অবস্থিত একটি সেতু অনেক পুরোনো। এর মধ্যে ফানাই নদী খননের সময় সেতুর নীচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বর্তমানে তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি সেতুগুলো দ্রুত সংস্কার করার জোর দাবি জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'সেতুগুলো নদী খননের কারণে না কি সেতু নির্মাণের সময় কোনো ত্রুটির কারণে দেবে গেছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।'

 

জেএইচ/আরআর-০১