ধর্মপাশা প্রতিনিধি
এপ্রিল ০৭, ২০২১
০৮:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৭, ২০২১
০৮:৫৯ অপরাহ্ন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দেওয়ায় ঘটনায সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে আফজাল খান (২৪) নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটার দিকে স্থানীয় জনতা ওই নেতাকে আটক করেন। আটক হওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি উপজেলার মহেশপুর গ্রামে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আফজাল খান (২৪)। খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ধর্মপাশা থানা পুলিশ আটক হওয়া ছাত্রলীগের ওই নেতাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।
ধর্মপাশা থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আফজাল খান (২৪) গত ২৯ মার্চ ফোসবুকে তাঁর নিজস্ব আইডি থেকে সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের আন্দোলনের কর্মসূচির বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন এবং ছবির ওপরের অংশে লিখে দেন ধর্মের নামে ব্যবসা।
মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে ছাত্রলীগের ওই নেতা জয়শ্রী বাজারে আসেন। এ সময় একই ইউনিয়নের বাদে হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোবাইলের কারিগর আল মুজাহিদ (২৫) স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন বয়সী ৩৫-৪০জন লোক নিয়ে ছাত্রলীগের ওই নেতার গতিরোধ করেন।
হেফাজতের আন্দোলনের ব্যঙ্গ করে কেন স্ট্যাটাস দিল ছাত্রলীগের নেতার কাছে আল মুজাহিদ তা জানতে চান।
এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও আল মুজাহিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। আল মুজাহিদ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে জনতার সামনে মুসলমান বানাবেন বলে তাঁর পরিহিত সার্টের কলারে ধরে টানা হেচরা শুরু করলে ওই ছাত্রলীগ নেতার কয়েকজন বন্ধু ও পরিচিত লোকজনদের সহায়তায় তিনি রক্ষা পান।
ধীরে ধীরে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে জয়শ্রী বাজারে তিন শতাধিক লোকজন জড়ো হয়ে পড়েন। তাঁরা ওই ছাত্রলীগ নেতাকে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটক করে রাখেন।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটার সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তাঁর নির্দেশে ওই ছাত্রলীগ নেতার হাতে তখন হাতকড়া পড়ানো হয়।
পোস্ট করা নিয়ে উপস্থিত লোকজনদের কাছে ওই নেতাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে ধর্মপাশা থানা পুলিশ।
নিরুপায় হয়ে ছাত্রলীগ নেতা জনতার কাছে ক্ষমা চান। পরে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে হাতকড়া পড়িয়ে ধর্মপাশা থানায় নিয়ে আসা হয়।
থানায় আসার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই ছাত্রলীগ নেতা সুনামগঞ্জ জেলা পুৃলিশ সুপারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটি সাদা কাগজে লিখে তাতে স্বাক্ষর করে থানা পুলিশের কাছ থেকে মুক্তি পান।
ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র হেফাজত ইসলামের যেসব নেতাকর্মী জ্বালাও পোড়াও করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। ’
ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমি এই ধর্মকে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে যারা আটক করেছিল তাঁদের হাবভাব দেখে মনে হয়েছে ওরা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল। ’
পুরো ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে জানিয়েছি।
আল মুজাহিদ মুঠোফোনে বলেন, ‘হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি ওই ছাত্রলীগ নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছেন । তাঁর সার্টের কলারে ধরে টানাহেঁচড়া করা হয়নি । ’
একজন মুসলমান হয়ে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করে স্ট্যাটাস ও অশালীন মন্তব্য করায় থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রাখেন। এর চেয়ে বেশি কিছু হয়নি।
এ ঘটনায় রাতেই ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এসএসআই আনোয়ার হোসেন কে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।
ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমাদের থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। আমি পরিস্থিতি শান্ত করার মাধ্যমে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি।’
এস এ/বি এন-০৪