হাওরে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা

সোহেল তালুকদার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ


এপ্রিল ২০, ২০২১
০১:৫২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২১
০১:৫২ পূর্বাহ্ন



হাওরে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ২৩টি হাওরে ফসলের মাঠ এখন সোনালি প্রান্তর। বোরো ধানের সোনালি চাদরে ঢাকা পড়েছে মাঠ। ছড়ায় ছড়ায় দুলছে কাঁচা-পাকা ধান। নতুন ধানের মিষ্টি ঘ্রাণে এখন মৌ মৌ করছে মাঠ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কোথাও কোথাও আগাম জাতের ধান কাটার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে আর কয়েকটি দিন রক্ষা পেলে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলায় এবার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা। অনুকূল পরিবেশ ও সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা পাওয়ায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এখন কৃষকরা সবুজ মাঠের দিকে থাকিয়ে ভাবছেন, কবে কষ্টের ফসল বাড়িতে নিয়ে গোলায় তুলবেন আর সবাইকে নিয়ে নতুন ধানের পিঠা খাওয়াবেন। এভাবে আশায় আশায় দিন যাচ্ছে তাদের।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২৯ হাজার ২২৭টি। উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ২২ হাজার ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ৮৯ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে, উফশী, ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে এবং স্থানীয় জাতের ধান হয়েছে ৬১০ হেক্টর জমিতে। 

স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। গতবার শিলাবৃষ্টিতে কোনো কোনো হাওরে সামান্য ক্ষতি হলেও এবার তুলনামূলক বেশি ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা হলো, শিলাবৃষ্টি ও অকাল বন্যাসহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন না ঘটে। 

গত শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার নাগডোরা, দাউড়িকান্দি, দেখার হাওর, সাংহাইর হাওর, কাউয়াজুরী হাওর, জামখোলা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে স্থানীয় কৃষকেরা ব্যাপকহারে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। হাওরে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। পাশপাশি হাওরের ধানের খলায় কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকেরা কেউ ক্ষেত থেকে ধানের মুঠো টানছেন, কেউ চিটা ছাড়াচ্ছেন, কেউ রোদে ছড়ানো ধান নেড়ে দিচ্ছেন। কেউ মেশিন দিয়া ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এসব কাজে বড়দের সঙ্গ দিচ্ছে শিশু-কিশোররা।

এ বছর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বোরো জমিতে তেমন পোকার আক্রমণ হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে স্থানীয় কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় কৃষক আগাম জাতের ব্রি ২৮, ২৯ ও হাইব্রিড এলসি-৮ জাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া, সার, বীজ ইত্যাদি কৃষিজ বিভিন্ন উপকরণ সঠিক সময়ে পাওয়ায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা।

জয়কলস ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের কৃষক মো. মতিন মিয়া বলেন, 'আমি এবার খুব খুশি বোরো ধান চাষ করে। গতবারের তুলনায় এবার আমি অনেক বেশি ফসল তুলতে পারব বলে আশা করছি। যদি ঝড়-বৃষ্টি না হয়, তাহলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে। ইতোমধ্যে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। কোনো কোনো এলাকায় আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ দু’একের মধ্যে আমার বোরো ধান কাটার উপযোগী হবে।'

উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'চলতি বোরো মৌসুমে সার, বীজ, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সংকট না থাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঝড়-বৃষ্টি ও ডোবরার পানিতে ফসলি জমির ধান কিছুটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আমরা নিয়মিতভাবে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের অনাবাদি জমিতে বোরো ধান উৎপাদনে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি।' 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, 'চলতি মৌসুমে আগাম বন্যার সতর্কতা জানিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে জড়িত পিআইসিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। হাওররক্ষা বাঁধে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের চিঠি দিয়ে জানানো হবে নিজ নিজ স্থান থেকে বাঁধের তদারকি করার জন্য। আগাম বন্যা থেকে হাওররক্ষা করার জন্য আমাদের টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।'

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, 'হাওরে ধান কাটার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। চলতি বছর শ্রমিক সংকট নিরসনে উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের মাঝে কৃষি বিভাগ থেকে ১০টি হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরেও ৮টি হারভেস্টার দেওয়া হয়েছিল। এ সপ্তাহের মধ্যে ধান কেটে ঘরে আনার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। আর কৃষি অফিসের কর্মীরাও মাঠে কাজ করছেন। কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। কারণ এবার আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'

 

এসটি/আরআর-১০