সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার
এপ্রিল ২৪, ২০২১
১০:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৪, ২০২১
১০:৩৯ অপরাহ্ন
কাতার প্রবাসী মো. আজির মিয়া (৪০)। বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে পরিবারকে সচ্ছল করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন দূর প্রবাসে। জীবনের বেশিরভাগ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। অবশেষে প্রবাস থেকে দেশে চলে আসেন একেবারে। আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বলেছিলেন আর যাবেন না কাতারে। কিন্তু হঠাৎ করেই কী ভেবে আবার কাতারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং চলেও যান। সেখানে যাওয়ার ৩১ দিনের মাথায় আবারও তিনি ফিরলেন দেশে। তবে এবারের ফেরাটা হলো লাশ হয়ে!
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী মো. আজির মিয়া গত ১৪ মার্চ বাংলাদেশ থেকে কাতারে যান। যাওয়ার কিছুদিন পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেখা দেয় করোনার উপসর্গ। হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ এপ্রিল মারা যান।
আজির মিয়ার লাশ কাতার থেকে দেশে এসেছে গত বৃহস্পতিবার। দেশে আপনজন বলতে আছেন তার চাচাতো ভাই ও বোনের স্বামী। আজির মিয়ার ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ স্ত্রী যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। আজির আয়ের বড় একটি অংশ যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে পেছনে ব্যয় করতেন। আগামী দুই বছর পর তিনিও যুক্তরাজ্যে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে স্থায়ী বসবাসের জন্য সকল প্রস্তুতি শেষ করেছিলেন। কিন্তু তার সব স্বপ্ন তছনছ করে দিল করোনা। ছেলে-মেয়ে তাদের বাবকে শেষ দেখাটা দেখতে পারল না।
এদিকে, করোনায় মৃত্যুর কারণে আজিরের মরদেহের কাছে আসতে চাননি গ্রামের মানুষজন। তখন লাশ দাফনের জন্য যোগাযোগ করা হয় বোরহান উদ্দিন (রহঃ) ইসলামি সোসাইটির দাফন ও সৎকার টিমের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে তারা দাফন সম্পন্ন করেন। এতে অংশগ্রহন করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব, মহাসচিব মিজানুর রহমান রাসেল, সাংগঠনিক সচিব সোহান হোসাইন হেলাল, টিম লিডার আশরাফুল খাঁন রুহেল, দপ্তর সচিব সিরাজুল হাসান, টিম মেম্বার সোহান রহমান, ইয়াসিন তালুকদার, মারুফ আহমদ খান পাভেল, নাঈম আহমেদ সানি ও নাঈম আহমেদ। মৌলভীবাজার জেলার সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী এ সংগঠন ২০০১ সাল থেকে আর্তমানবতার কল্যাণে নিবেদিত একঝাঁক তরুণ মেধাবীর নেতৃত্বে কাজ করছে জেলার শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে। করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরনকারী ব্যক্তি যে ধর্মেরই হোন না কেন, কোনো আর্থিক বিনিময় ছাড়াই তারা ছুটে যান মৃতের দাফন ও সৎকারে।
করোনায় মৃত্যুবরণকারী একজনের স্বজন ফজলু মিয়া বলেন, 'আমার বোনের স্বামী কাতারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আজ (গতকাল শুক্রবার) তার লাশ দেশে এসেছে। যেহেতু তিনি করোনায় মারা গেছেন, তাই ঝুঁকি এড়াতে আমি বোরহান উদ্দিন সোসাইটিকে জানাই। তারা এসে লাশের দাফন সম্পন্ন করেছেন।'
শেখ বোরহান উদ্দিন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, 'আমরা এ পর্যন্ত ২০টি মরদেহের দাফন ও সৎকার করেছি। আমরা একেকটি দাফনে গিয়ে একেক রকমের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। অনেকে এসে জানাজা পড়ছেন, কিন্তু লাশ কিংবা কবরের পাশে কেউ আসছেন না। আমাদের টিমের দৃঢ় মনোবল আছে। যতই ক্লান্তি আসুক আমাদের এই মানবিক কাজটি থামিয়ে রাখব না। আমরা কিছুদিন পর অক্সিজেন সার্ভিস ও করোনার নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেব।'
এসএইচ/আরআর-০২