ধানের দাম নিয়ে হতাশ হাওরপাড়ের কৃষকরা

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


এপ্রিল ২৯, ২০২১
১০:৪০ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৯, ২০২১
১০:৪০ অপরাহ্ন



ধানের দাম নিয়ে হতাশ হাওরপাড়ের কৃষকরা

কৃষকদের ধান ন্যায্যমূল্যে কেনার দাবি জানিয়ে আসছিল সুনামগঞ্জের কৃষক সংগঠন। সে অনুযায়ী এবার ধানের দাম মণপ্রতি ৪০ টাকা বেড়েছে। তবে এই ৪০ টাকা বৃদ্ধি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এই দামে ক্ষোভ জানিয়েছেন হাওরের বোরো ফসল ফলানো সাধারণ কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীন বাজার থেকে ধানের দাম প্রতি কেজি ২৭ টাকা নির্ধারণ করে কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে এক মণ ধানের দাম হয় ১০৮০ টাকা। যা গতবছর ছিল ১০৪০ টাকা। গত সোমবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ তথ্য জানান।

ধর্মপাশার বান্নার হাওর ও ধারাম হাওরে ১৪ কিয়ার বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষক আবু সিদ্দিক। তিনি বলেন, '১০৮০ টাকা দরে ধান বিক্রি করলে লোকসান। কারণ আমাদের খরচ হয় অনেক। ঋণ করে ধান চাষ করেছি। দুইশ মণ ধান বিক্রি করে পাওনাদারের এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।'

জামালগঞ্জ উপজেলার কৃষক মো. এরশাদ বলেন, 'বৈশাখ মাসে এমনিতেই ধানের দর কম থাকে। আবার বৈশাখ মাস গেলেই হু হু করে দাম বেড়ে যায়। গেল চৈত্র মাসে বেসরকারিভাবেই প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা দামে ধান বিক্রি করা গেছে। এখন সরকার এর থেকেও কম দামে ধান কিনবে। তাহলে কৃষক যাবে কোথায়? আমাদের তো লোকসান।'

হাওরের কৃষক সংগঠনের নেতারা বলছেন, কৃষকদের নিয়ে সবসময় সরকারের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এক মণ ধান উৎপাদন করতে একজন কৃষকের প্রায় সাড়ে নয়শ টাকা খরচ হয়। তার নিজের শ্রম যুক্ত করলে দাম আরও বাড়বে। কিন্তু তাকে ধান বিক্রি করতে হবে মণপ্রতি ১০৮০ টাকায়। এতে কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করার পরিবর্তে আরও অনুৎসাহিত করা হচ্ছে।

জেলা কৃষক সমিতির আহ্বায়ক অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, 'হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে কৃষকের ধান কাটা প্রায় শেষ। এখন মাড়াই ও শুকানো হচ্ছে। এসব ধান অনেকে খলা থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ যখন সরকারের ধান কেনার কথা, তখন কেনে না। এই সুযোগ নেয় মিল মালিক-ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। ধান আবাদ করতে কৃষকরা যে ঋণ নিয়েছিলেন মহাজনের কাছ থেকে, তা পরিশোধ করতে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের সোনালি ধান। সরকারের কাছে আমরা সবসময় দাবি জানিয়েছি কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনার জন্য। বৈশাখ মাসের শেষের দিক থেকেই ধান কেনা শুরু করতে হবে। নয়তো কৃষকদের বাঁচানো যাবে না।'

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু বলেন, 'কৃষকরা সবদিকেই বঞ্চিত। অনেক সময় হাওর ডুবে ফসলহানি হয়। তবে এবার কৃষকরা সোনার বৈশাখ পেয়েছেন। ধান কেটে শুকিয়ে গোলায় তুলতে পারছেন। কিন্তু ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি ধানের দাম বাড়িয়ে ন্যায্যমূল্যে কেনার জন্য। এবার দাম বেড়েছে, তবে মাত্র ৪০ টাকা। সেটা কৃষকদের নিয়ে উপহাস করার মতো। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ে। বাড়ে না শুধু কৃষকের ধানের দাম।' 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তা নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম বললেন, 'সরকার ধানের দাম নির্ধারন করে দিয়েছে। সে দাম অনুযায়ী প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে ১০৮০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কৃষকরা ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণ ধানের দাম নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন। তবে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে যারা রয়েছেন, তারা ধানের দাম নির্ধারণ করেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।'

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফরিদুল হাসান বলেন, হাওরে প্রায় ৮২ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। আগামী ৫ মের পর ধান বাকি থাকবে না কোনো হাওরে। এবারের বৈশাখ ভালো হয়েছে। ক্ষেত থেকে ধান গোলায় তুলতে পেরে খুশি কৃষকরা।'

 

এএম/আরআর-০২