সিলেট মিরর ডেস্ক
                        এপ্রিল ৩০, ২০২১
                        
                        ০৪:০০ পূর্বাহ্ন
                        	
                        আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০২১
                        
                        ০৪:০০ পূর্বাহ্ন
                             	
                        
            
    সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম। বাধ্য হয়েই বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করতে হয়েছে। কাগজে-কলমে হেফাজত অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হলেও সংগঠনটির জন্ম থেকে অদ্যাবধি তাদের কর্মকাণ্ড ধর্মীয় চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। অভিযোগ রয়েছে, রাজনীতির মাঠে যখন যেদিকে সুবিধা পেয়েছেন তাদের পক্ষেই কাজ করেন সংগঠনটির নেতারা। হেফাজত কখনও কখনও ব্যবহার হয়েছে অন্যের ঘুঁটি হিসেবেও। ফলে ইসলামের রীতিনীতি প্রচার ও প্রসারে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে যে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে দাবি করা হয় তা এখন দ্বিধাবিভক্ত ও বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের দুই ধারা ভিন্ন পথে হাঁটছে। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের কেউ ব্যস্ত সরকারের সঙ্গে সমঝোতায়, কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে চলে গেছেন আত্মগোপনে। ঠিক বিপরীত চিত্র প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীদের। তারা সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যস্ত সংগঠন গোছাতে। এমনকি ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের চাঙা করে মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।
আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, 'আল্লামা আহমদ শফীর গঠন করা কমিটি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। সিনিয়র নেতা ও দেশের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে দ্রুত বৈঠক হবে। ওই বৈঠক থেকে হেফাজতে ইসলামের পুনর্জাগরণের ঘোষণা দেওয়া হবে।'
বর্তমান কমিটি সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে হয়নি দাবি করে মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, 'বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটিতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। তারা আলেম-উলামাদের সরকার ও সহিংসতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এটা আল্লামা শফীর আদর্শচ্যুতি এবং তাঁর সঙ্গে গাদ্দারি। এটি করা হয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য।'
বিলুপ্ত কমিটির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার বলেন, 'হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্ত করে পুনর্গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে হতে হবে। তা না হলে হেফাজতে ইসলামকে আরো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।'
বাবুনগরীর অনুসারী এক নেতা বলেন, 'হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা বর্তমানে সংগঠন নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা করছে না। তাদের সবাই গণগ্রেপ্তার ও নাশকতার মামলা নিয়ে টেনশন ও আতঙ্কে আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাধারণ নেতাকর্মীরা আসবে না, এটা নেতাদের জানা আছে। তাই বিলুপ্ত কমিটির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না আপাতত।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে নাশকতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতাসহ শতাধিক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নাশকতা মামলা এবং আল্লামা শফী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন শীর্ষ নেতারা। গ্রেপ্তার এড়াতে শীর্ষ নেতাদের অনেকে এখন আত্মগোপনে। চরম এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ও টেনশনে দিন কাটছে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী অনুসারীদের। তার ওপর গত শনিবার রাতে হঠাৎ ফেসবুক লাইভে এসে কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটিগুলো ভেঙে দেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এতে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় সংগঠনে।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের কোণঠাসা সুযোগে ফের সক্রিয় হয়েছেন প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা। তারা বর্তমান কমিটির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন নানাভাবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের ফের সক্রিয় করছেন। গত কয়েক দিনে দেশের সব বড় বড় মাদরাসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন শফীর অনুসারীরা। আল্লামা আহমদ শফী অনুসারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতা পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া এরই মধ্যে প্রয়াত আমিরের ২৫ হাজার মুরিদ ও খলিফার তালিকা তৈরি করে তাদের সক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলছে।
আল্লামা শফীর ছাত্র-অনুসারীদের নিয়েই মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মাঠে সক্রিয় হচ্ছে 'আসল হেফাজতে ইসলাম'।
বিএ-০৭
সূত্র: কালের কন্ঠ