সুনামগঞ্জে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


মে ০১, ২০২১
০১:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ০১, ২০২১
০১:১২ পূর্বাহ্ন



সুনামগঞ্জে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ

কালবৈশাখীর ভয়ানক তাণ্ডব ও চোখ রাঙানো, শিলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনের মুখে পড়তে হয়নি এবার সুনামগঞ্জের হাওর-ভাটির আড়াই লাখ চাষি পরিবারকে। তীব্র গরমে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো কষ্টকর হলেও এবার বোরো মৌসুমে ধান তেমন নষ্ট হয়নি। বাম্পার ফলন পেয়ে তাই হাসিতে ভরপুর কৃষকের মুখ। ফসলের ওপর বছরের জমানো স্বপ্ন এবার বাস্তবায়িত হবে- এ প্রত্যাশা করছেন তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার শতাধিক হাওরে ৯০ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। আসছে সপ্তাহেই ধান কাটা সারা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মৌসুম ভালো হওয়ায় এবার নির্বিঘ্নে টানা ধান কাটতে পেরেছেন কৃষকরা। রোদের কারণে সেই ধান সহজে শুকিয়ে গোলায় তুলতেও সক্ষম হয়েছেন। তাই এবারও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধ কোনো কাজে আসেনি।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার হাওরে গড়ে ৯০.৩৩ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে হাওর ও হাওর বহির্ভূত এলাকা মিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত গড়ে ৭৭.৩০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্রতগতিতে ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে, জেলার হাওরগুলোতে এ বছর ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯০.৩৩ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। সরকারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ধান কাটা হয়েছে শাল্লা উপজেলায়। এ উপজেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৯৬.৫০ ভাগ। সবচেয়ে কম ধান কাটা হয়েছে জামালগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলার হাওরে ধান কাটার গড় হার ৭৯ ভাগ। 

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হাওরে ৮৩ ভাগ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৯৫ ভাগ, দোয়ারাবাজারে ৯৪ ভাগ, ছাতকে ৮৫.৯৯ ভাগ, জগন্নাথপুরে ৯৫.৯৯ ভাগ, দিরাইয়ে ৯২.০২ ভাগ, বিশ্বম্ভরপুরে ৯১.৯৯ ভাগ, তাহিরপুরে ৮০ ভাগ এবং ধর্মপাশায় ৯৩.৩৩ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আসছে সপ্তাহের মধ্যেই হাওরের সম্পূর্ণ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ মৌসুমে হাওর বহির্ভুত এলাকায় আরও ৫৭ হাজার ৬৬৫ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। হাওর ও হাওর বহির্ভুত এলাকা মিলিয়ে মোট আবাদ হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। হাওরের বাইরে মোট ধান কাটা হয়েছে ৩৯.৮৭ ভাগ। হাওরের বাইরের জমির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান কাটা হয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় ৬৭.০১ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সবচেয়ে কম মাত্র ১৪ ভাগ ধান কাটা হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়। 

ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কৃষক আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, 'আমাদের এলাকায় হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ। প্রাকৃতিক বৈরিতার মুখে পড়তে হয়নি আমাদের। শ্রমিক সংকটও ছিল না। তাই দ্রুত ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে এবার। তবে ধান কাটতে পেরে এখন হাওরের কৃষকরা খুশি।'

শনির হাওরের মধ্য তাহিরপুরের কৃষক মো. আয়ূব আলী বলেন, 'আমি ১৬ কিয়ার জমিন খরছিলাম। সব ক্ষেতের ধান খাটিলিছি। ইবার আমার মতো অন্য গিরস্তরাও খুশি। সবাই ধান তলতে পারব। এখন বান-বৃষ্টি আইলেও আর কোনো সমস্যা অইতো না।'

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, 'এ বছর মৌসুম ভালো। জেলার প্রায় আড়াই লাখ চাষি পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে বোরো ধান।'

 

এসএস/আরআর-০৯