'লকডাউনে' মহাসড়কে অটোরিকশার দাপট

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


মে ০৫, ২০২১
১০:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০৬, ২০২১
০২:০৩ পূর্বাহ্ন



'লকডাউনে' মহাসড়কে অটোরিকশার দাপট

সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে বেড়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের দাপট। 'লকডাউনে' গণপরিবহণ বন্ধ, তাই সাধারণ মানুষ এসব যানের উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। তবে 'লকডাউনে' সরকারি বিধিনিষেধ সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার থাকলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। এতে ঘাতক ভাইরাসটির সংক্রমণরোধে প্রজ্ঞাপন থাকলেও প্রশাসনের শিথিলতায় সুনামগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

প্রতিবেশী দেশ ভারত বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে যখন নাজেহাল, তখন আমাদের দেশেও চলছে এই ভাইরাসের তাণ্ডব। গত কিছুদিন ধরে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাই করোনার বিস্তাররোধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। ইতোমধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রাখা ও নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। প্রশাসন প্রথম কয়েকদিন ছিল কঠোর, তবে জনগণও ছিলেন উদাসীন। তাদের মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই চলাচল করতে দেখা গেছে সড়কে। এসব রোধে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে কয়েক দফায় চেক পোস্ট বসানো হয়েছিল। এসব চেক পোস্টের জন্য জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করা যানবাহন ছাড়া আর কোনো যান দেখা যায়নি। তবে এখন সেসব চেক পোস্টের বালাই নেই। ইচ্ছেমতো অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে এমন চিত্রই দেখা গেছে। 

এদিকে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কয়েকটি জায়গায় পুলিশের চেক পোস্ট দেখা গেছে। এখান থেকে প্রথম কয়েকদিন নজরদারিতে রাখা হয়েছে সড়ক। এসব চেকপোস্টে এখন পুলিশ সদস্যরা থাকলেও পরিবহন চেক করতে দেখা যায়নি তাদের। 

জেলা শহরের মল্লিকপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আছে তেমনই একটি পুলিশের চেক পোস্ট। 'কঠোর লকডাউনে' গেল কয়েকদিনে এই এলাকা থেকে পরিবহন তল্লাশি ও প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হয়েছেন কি না তদারকি করেছেন তারা। কিন্তু এখন পুলিশ থাকলেও চেক করছেন না তারা। তাদের পাশ কাটিয়ে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যাচ্ছে মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। 

এই এলাকায় সিলেট মিরর এর এই প্রতিনিধির কথা হয় মাইক্রোবাসের (নোহা) চালক খোকন মিয়ার সঙ্গে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, তিনি ১৪ দিন পর গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন মহাসড়কে। এসব গাড়িতে করে স্বাভাবিক সময়ে সিলেটের ভাড়া আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা হলেও এখন ভাড়া দুইশ’ টাকা। আর বাসের ভাড়া একশ টাকা।

পঞ্চাশ থেকে একশ টাকা ভাড়া কম নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন সিএনজিতে (অটোরিকশা) করে যাত্রীরা সিলেটে চলে যায়। সিএনজিতে দুইশ টাকা হলেই যাওয়া যায়। তাই যাত্রীদের এখন সিএনজির প্রতি ঝোঁক। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমরা কিছু কম টাকায় হলেও যাত্রীদের নিয়ে চলে যাচ্ছি সিলেটে।'

'লকডাউনে' সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে যাত্রী পরিবহন ঠিক হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক বলেছেন, 'লকডাউনের' অনেক দিন হয়ে গেছে। 'কঠোর লকডাউনে' প্রথমদিকে তারাও বিধিনিষেধ মেনে পরিবহন চালানো বন্ধ রেখেছেন। তবে এখন তাদের ঘরে খাবার নেই। তাই বাধ্য হয়েছেন পরিবহন নিয়ে সড়কে বের হতে।

যাত্রী মনসুর মিয়া জানান, তিনি একজন নির্মাণ শ্রমিক। নিজের গ্রামের বাড়ি সিলেট থেকে 'লকডাউনের' মধ্যেই মাঝে মাঝে সুনামগঞ্জে কাজ করতে আসেন। মহসড়কে চলতে কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আগে আসতে পারতাম না। পুলিশ গাড়ি আটকে দিত। এখন সবাই চলাফেরা করছে। কোনো সমস্যা হয় না।' 

শিক্ষাবিদ ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস সিলেট মিররকে বলেন, 'আমি একা নই, বরং প্রতিটি সচেতন মানুষ একটু অবাক হয়েছেন এখন। কারণ কঠোর লকডাউন বলতে আমরা যা বুঝি বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। মানুষের পেটে খাবার না থাকলে বের হবেই। কয়েকদিন আগেও করোনায় মৃত্যুর হার ১১০, ১১২ হতে দেখেছি। এখন কিছুটা কমেছে। তবে স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ মানুষ সচেতন নয়, তারা অপ্রয়োজনে বের হচ্ছে। তাই প্রশাসনকে আগের মতো নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ ঈদের সময় নিষেধ কিছুটা শিথিল করে দেবে সরকার। এখন যদি সংক্রমণ থামানো না যায়, পরে আরও ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, 'সড়কে আমাদের নিয়মিত নজরদারি ও তল্লাশি রয়েছে। পরিবহন থামিয়ে আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন হাওরে ধান কাটতে যাচ্ছেন। অথবা অন্য কোনো জরুরি কাজের কথা বলেন। হাওরে ধান কাটা চলছে, তাই আমরাও আটকাই না।'

 

এএম/আরআর-০১