ধর্মপাশায় পুরোনো রাস্তাকে নতুন দেখিয়ে প্রতারণা!

শামীম আহমেদ, ধর্মপাশা


মে ০৫, ২০২১
১১:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০৫, ২০২১
১১:০৯ অপরাহ্ন



ধর্মপাশায় পুরোনো রাস্তাকে নতুন দেখিয়ে প্রতারণা!
তিন লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের উত্তরবীর রাস্তা থেকে কাচা আবুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটিকে এলজিএসপি-৩ এর অর্থায়নে ৩৫০ ফুট পাকাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭ থেকে ৮ মাস আগে। কিন্তু নতুন করে ওই রাস্তাটির পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) তিন লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের উত্তরবীর রাস্তা থেকে কাচা আবুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটির দূরত্ব প্রায় ৩৫০ ফুট। লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) এর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ২ লাখ ৭ হাজার ৯৯৫ টাকা বরাদ্দ দিয়ে গত ৭ থেকে ৮ মাস আগে ওই রাস্তাটি সিসি দ্বারা পাকা করা হয়।

কিন্তু একই রাস্তা পাকাকরণ করার জন্য চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোটেশনের মাধ্যমে কাজটি পান মেসার্স নূর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন। দুই সপ্তাহ আগে ঠিকাদার ওই রাস্তাটিকে একজন শ্রমিক দিয়ে প্রথমে ঝাড়ু ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করান। পরে একজন মিস্ত্রির মাধ্যমে এটির উপর সিমেন্টের হালকা প্রলেপ দেওয়া হয়। আর এতেই রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন দেখানো হয়।

গত ২১ এপ্রিল দুপুরে এলজিইডি'র উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ খানের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন এ রাস্তাটির উদ্বোধন করেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছ থেকে ওই রাস্তার কাজ না করে এডিপি'র বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলী দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।

উত্তরবীর গ্রামের বাসিন্দা নূরুল হক (৪৭) বলেন, 'এই রাস্তার কামডা ৭-৮ মাস আগে করা অইছিল। ১০-১৫ দিন আগে রাস্তাডায় ঝাড়ু দিয়া রাস্তাডা পরিষ্কার কইর‌্যা রাস্তাডার উপর সামান্য কইরা সিমেন্ট দিয়া প্রলেপ দেওয়া অইছে। আগের কামের যে ফলকটা আছিল, হেইডার উফরে নয়া কইরা আরেকটা ফলক বসাইয়া দেওয়া অইছে। সরহারি টেহা এইবায় লুটপাট অয়, এইডা কি দেহার কেউ নাই?'

সেলবরষ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উত্তরবীর গ্রামের বাসিন্দা দৌলত মিয়া বলেন, 'ওই রাস্তাটি আগে থেকেই পাকা। এর পরও সেটিকে নতুন করে পাকাকরণ দেখানো হয়েছে। এটি একধরনের প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। যাবতীয় বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।'

অভিযুক্ত মেসার্স নূর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদ হোসেন দাবি করেন, 'ওই রাস্তায় ২০০ ফুট পাকাকরণ কাজ এলজিএসপির বরাদ্দ থেকে করা হয়েছে। বাকি ১৫০ ফুট রাস্তা আমি এডিপির মাধ্যমে পাকাকরণের কাজ করেছি। যারা বলছেন কাজ করিনি, তারা মিথ্যা বলছেন। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।'

উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ খান বলেন, 'তাড়াহুড়ো করে ওই রাস্তাটির উদ্বোধন করায় প্রথমে ঘটনাটি বুঝে উঠতে পারিনি। পরে স্থানীয় মানুষজন ও ইউপি সদস্যের কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জেনেছি। এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের কাজটিকে এডিপির প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এখনও কোনো বিল দেওয়া হয়নি। ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, 'ঘটনাটি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

 

এসএ/আরআর-০৪