সুনামগঞ্জে নদীভাঙনে পাল্টে গেছে গ্রামের মানচিত্র

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


মে ০৫, ২০২১
১১:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০৬, ২০২১
১০:৩৬ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে নদীভাঙনে পাল্টে গেছে গ্রামের মানচিত্র
ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৫০টি পরিবার

দীর্ঘদিন ধরে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীভাঙনের কবলে পড়ে গ্রামের মানচিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০টি পরিবারের। তন্মধ্যে অন্তত ২৫টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এই নদীভাঙন প্রতিরোধে মৌখিক ও লিখিতভাবে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কথাগুলো জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও গ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম তালুকদার।

লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের হবতপুর গ্রাম দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত নদীভাঙনের কবলে রয়েছে। এতে অন্তত ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে আরও ২৫টি পরিবার। কিন্তু নদীভাঙন প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ অবস্থায় আবারও নদীভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

হবতপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, এই গ্রামের আব্দুর রশিদ নদীভাঙনের কবলে পড়ে বাড়ি ও জমি হারিয়েছেন। এছাড়া গ্রামের বাসিন্দা আপ্তাব উদ্দিন, জুনাব আলী, আতর আলী, হুসেন আলী, শফিকুল ইসলাম, আজাদ মিয়া, এনামুল হক, ফয়েজুল হক, আমিরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, এমদাদুল হক, নাজমুল হক, আলম হোসেন, মোশারফ আলী, মনফর আলী, আজমিলা বেগম, নাছির উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, ছায়াতুন নেছা, অলিউর রহমানসহ আরও অনেকেই ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন। হবতপুর গ্রামে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রাস্তাঘাট, দোকানপাট, ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে।

ক্ষতিগ্রস্ত আজমিলা বেগম বলেন, 'আমার বাড়ি ছিল, জমিও ছিল। এখন কিছুই নেই। মানুষের বাড়িতে থাকি আর খাই। সরকার অনেককে বাড়িঘর দিচ্ছে, কিন্তু আমার কপালে কিছুই নেই। তাই পাইনি।' 

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ছায়াতুন নেছা বলেন, 'নদীভাঙনে শুধু আমাদেরই ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত মানুষের। গৃহহারা হয়েছেন অনেকে। নদী সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।' 

শাহানারা বেগম বলেন, 'আমার বাড়িঘর সব কেড়ে নিয়েছে সুরমা নদীর ভাঙন। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসহায় জীবনযাপন করছি।' 

আব্দুর রহমান বলেন, 'পুরো হবতপুর গ্রাম নদীভাঙনে পড়েছে। প্রায় অর্ধেক গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরিভাবে এই ভাঙন প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।'

ক্ষতিগ্রস্ত অলিউর রহমান বলেন, 'নদীভাঙনে আমার বাড়ি গেছে, ফসলি জমিও গেছে। খেটেখুটে খাই, থাকি মানুষের বাড়িতে।' 

ক্ষতিগ্রস্ত হুসেন আলী বলেন, 'নদীভাঙন মানুষকে নিঃস্ব করেছে। আমিও নিঃস্ব হয়েছি। কিন্তু ভাঙন এখনও থামেনি। থামানোর ব্যবস্থাও করেনি কেউ।'

লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, 'হবতপুর এলাকায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শিগগির নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে মানুষ আরও ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।' 

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, 'স্থায়ী নদী শাসনের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে। অনুমোদন হয়নি।'

 

এএম/আরআর-০৫