নিম্নবিত্তের পকেট ফাঁকা, বিষন্ন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


মে ০৬, ২০২১
১১:১১ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ০৬, ২০২১
১১:১১ অপরাহ্ন



নিম্নবিত্তের পকেট ফাঁকা, বিষন্ন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা

বাজারে এখন ঈদের আমেজ। সরকার 'কঠোর লকডাউনের' মাঝে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করায় মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠতে শুরু করেছে। তবে ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মাঝে ঈদের কেনাকাটা নিয়ে কোনো উৎসাহ নেই। সুনামগঞ্জ শহরের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন দোকানে বসে। আর ক্রেতারা বলছেন, হাতে টাকা না থাকায় এবারের ঈদে কিছুই কেনাকাটা হবে না তাদের।

সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বিমর্ষ মুখে বসে আছেন। অথচ শহরের মার্কেটগুলো ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম। শহরের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষজন সেসব মার্কেটে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য একাধিক জামা কিনছেন। ফুটপাতের দোকানগুলোতে তাদের চাহিদা নেই। আর যারা ফুটপাতের ক্রেতা, সেই নিম্ন আয়ের মানুষের পকেট ফাঁকা। তারা কেনাকাটায় না থাকায় ক্ষতির মুখে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের এই সময়টাতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে দোকানে। তবে এবার কোনো ক্রেতা নেই। কারণ তাদের ক্রেতারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। শহরের রিকশা শ্রমিক, টং দোকানিরা তাদের দোকানে জামা-কাপড় কিনতে আসেন। এবার লকডাউনের কারণে সেই শ্রেণির হাতে টাকা নেই। ফলে পুঁজি খাটিয়ে ফুটপাতে পসরা নিয়ে বসলেও বেচা-বিক্রি না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

ফুটপাতের ব্যবসায়ী আলামিন, মো. আলী খোকন ও মো. আব্দুল জব্বার বলেন, 'গতকাল ৭শ থেকে ৮শ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। আজ কোনো বিক্রি নেই। এ পর্যন্ত কোনো ক্রেতা আসেনি। ক্রেতা এলে কিছু বেচাকেনা হবে। বাজার এ রকম মন্দা হওয়ায় পরিবার নিয়ে কিভাবে ঈদ করবেন সেই প্রশ্ন তাদের।

তারা বলছেন, লকডাউনে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে টাকা থাকলেও নিম্ন আয়ের মানুষের পকেট ফাঁকা। গরিব মানুষ এবার ঈদে কেনাকাটার জন্য আসছে না। এতে নিম্ন আয়ের মানুষদের মতো তাদের পকেটও ফাঁকা হয়ে আছে। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসায় খাটানো পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে।

নরসিংদীর বাসিন্দা মো. দুলাল মিয়া সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ডিএস রোডের পাশে ১০ বছর যাবৎ কাপড় বিক্রি করছেন। প্রতিবছরই রমজানে তার ব্যবসা ভালো হয়। এই একমাসে যা লাভ হয়, তা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেন। কিন্তু এবার তার দোকানেও কোনো বিক্রি নেই।

দুলাল মিয়া বলেন, 'আমরা ফুটপাতের ব্যবসায়ী। গরিব মানুষ আমাদের কাছ থেকে পরিবারের জন্য কাপড় কিনে নেন। তাদের মার্কেটে গিয়ে কাপড় কেনার ক্ষমতা নেই। কম দাম হলেও ভালো মানের কাপড় আমরা বিক্রি করি। তবে এবার কোনো বেচাবিক্রি নেই। কারণ কিছু মানুষ চলে গেছে হাওরে ধান কাটতে। আর শহরে যারা আছে, তাদের কাছে টাকা নেই।' 

এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষজন বলছেন, সরকারের বিধিনিষেধের কারণে তাদের রোজগারে ভাটা পড়েছে। সবজি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রিকশাচালক সবার আয় কমে গেছে। দিনে যা উপার্জন করতে পারেন, সেটা পরিবারের ভরণ-পোষণেই খরচ হয়ে যায়। অনেকে সহযোগিতা নিয়ে ও ধার-দেনা করে চলছেন। তাই সন্তানের আবদার অনুযায়ী নতুন কাপড় কিনে দেওয়া হবে না এই ঈদে। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মোক্তার আলী বলেন, 'আমি বেতের লাঠি বানিয়ে বিক্রি করি। এই লকডাউনে আমার কোনো বেচাবিক্রি নেই। টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছি। পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বাকি রয়েছে ৪ জন। গত ১ বছর ধরে মেয়েদের কোনো জামা কিনে দিতে পারিনি। ভেবেছিলাম এবার ঈদে মেয়েদের নতুন জামা কিনে দেব। কিন্তু এবারও হয়তো কিনে দেওয়া হবে না। কারণ আমার হাতে কোনো টাকা নেই।'

শহরতলীর নবীনগরের বাসিন্দা রিকশাচালক আব্দুল হাকিম বলেন, 'রিকশা চালিয়ে খাই। এখন কীভাবে ঈদ করব? শহরে তো রিকশা চালাতে পারি না। রিকশা নিয়ে বের হলে পুলিশ দৌড়ায়, মারে। এখন কোন পথে যাব আমরা?' এবার ঈদে সন্তানদের নতুন জামা কিনে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, 'সকাল ১০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেটগুলো খোলা থাকবে। তবে যারা অসুবিধায় আছেন, তাদের আমরা সহযোগিতা করছি। ইতোমধ্যে অনেক অসহায় পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।'

 

এএম/আরআর-০২