ছায়ার হাওরে ১১৫ কোটি টাকার ধান উৎপাদন

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


মে ০৮, ২০২১
০৫:১৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ০৮, ২০২১
০৬:০১ পূর্বাহ্ন



ছায়ার হাওরে ১১৫ কোটি টাকার ধান উৎপাদন

সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ আর নেত্রকোণা নিয়ে বিস্তৃত ছায়ার হাওর। তিনটি জেলার সমন্বয়ে এই হাওরের বেশিরভাগ জমিই সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় অবস্থিত। ইতোমধ্যে হাওরটির ধান কাটা শেষ হয়েছে। এখন ধান শুকানো আর খড় সংগ্রহ করতেই হাওরের খলায় দেখা যাচ্ছে কৃষকদের। খড়গুলো হাওরের জাঙ্গালে আর সড়কের পাশে গম্বুজাকৃতি করে আপাতত রেখেছেন তারা। যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘খড়ের লাছি’ বলা হয়। ধান গোলায় তোলার কাজ শেষ হলেই খড় আরও ভালোভাবে শুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে লাছি করে রাখবেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগের হিসেবে এই হাওরে ১১৫ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। তবে মৌসুমের বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং পরাগায়ণ মুহূর্তে হিট শকে হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জমি নষ্ট হওয়ায় ফলন কিছুটা কমেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় ফসল তুলতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে ছায়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাওরটির ধান কাটা প্রায় শেষ। হাওরের ধান কাটার তেমন জমি আর বাকি নেই। তাই ক্ষেতগুলো ন্যাড়া মাথায় পড়ে আছে। কোথাও কোথাও ক্ষেতে গবাদিপশু ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কৃষক এখনো ধান কাটছেন। ধানের মুঠো মাথায় নিয়ে খলার দিকে ছুটছেন তারা। এ সময় সবাইকেই ধানখলায় ব্যস্ত দেখা গেছে। দিরাই উপজেলার মিলনবাজার থেকে শাল্লা উপজেলার নিজ শাল্লা পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে। জাঙ্গালে তৈরি খলায় ধান শুকানো, ধানের চিটা ছাড়ানো এবং খড় শুকানোর কাজ করছেন কিষাণ-কিষাণী। অনেকে শুকানো ধান ও খড় নানা ধরনের পরিবহনে বাড়িতে নিচ্ছেন। তীব্র রোদে পুড়ে কষ্টের ফসল গোলায় তুলছেন তারা। অনেককে দেখা গেল খলাতেই ধান সিদ্ধ করছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কিছু জমির ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষকই ধান কাটেননি। পরাগায়ণ মুহূর্তে অগ্নি বাতাসের ছিটায় এই ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান কাটতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের মতে, ছায়ার হাওরে ১৮০ হেক্টর জমির বোরো ধান অগ্নি বাতাসে নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া অল্প কিছু জমি শিলায় নষ্ট হয়েছে। তবে তাতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়েনি। কৃষকরাও বলছেন, ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে তারা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা কৃষি বিভাগের মতে, ছায়ার হাওরের শাল্লা অংশে বোরো জমি আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৭ হেক্টর। এর মধ্যে দিরাই উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমি। নেত্রকোণার খালিয়াজুড়িতে ৯০০ হেক্টর এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় অন্তত ১৫০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। সবমিলিয়ে এ বছর ছায়ার হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২১২ হেক্টর বোরো জমি। এই হাওরে গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টরপ্রতি ৪.০২ মেট্রিক টন চাল, যার আনুমানিক মূল্য অন্তত ১১৫ কোটি টাকা।

ছায়ার হাওরের কৃষক মন্টু দাস বলেন, 'আমাদের শাল্লার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কৃষকের জমির ধান অগ্নি বাতাসে পুড়ে গেছে। সেগুলো কাটার উপযুক্ত ছিল না। এতে কিছু কিছু কৃষকের বড় ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রান্তিক চাষি। অল্প জমি চাষ করেছিলাম। আমার সবগুলো জমি অগ্নি বাতাসে নষ্ট হয়ে গেছে।'

ছব্বিশা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, 'ধান কাটা শেষ করেছি। এখন ধান ও খড় শুকিয়ে বাড়িতে নিচ্ছি। বছর ভালো হওয়ায় সব কৃষকই এবার স্বস্তিতে ধান কেটেছেন। তবে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলন কিছুটা কম। তারপরও সব ধান কাটতে পেরে আমরা আনন্দিত। এখন ভালো মূল্য পেলে কৃষকরা কিছুটা লাভবান হতে পারবেন।'

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, 'ছায়ার হাওর ও নলুয়ার হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। কৃষকরা এখন এসব ক্ষেতে গবাদি পশু ছেড়ে দিয়েছেন। কাটা ধান মাড়াই শেষে তারা শুকিয়ে এখন গোলায় ভরে রাখছেন। সংগ্রহ করছেন গবাদিপশুর খড়। এবার হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ৪.০২ মেট্রিক টন চাল।'

 

এসএস/আরআর-০২