সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
মে ০৮, ২০২১
০৫:৩১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৮, ২০২১
০৫:৩১ পূর্বাহ্ন
ঝর্ণা চোধুরী
সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরে এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে মহল্লাজুড়ে আলোচনা চলছে। এক সপ্তাহ আগে মধ্যবয়সী এই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। তিন সন্তানের এই জননীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় নারী সংগঠনগুলো।
জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল রাতে এই নারীর মৃত্যু হয়। তার নাম ঝর্ণা চোধুরী। তিনি শহরের হোসেন বখত চত্বরের পাশের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী বিভু চৌধুরী। তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভায় অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন।
ঝর্ণার পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৯ এপ্রিল রাত ৯ টায় ঝর্ণা চৌধুরী নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। স্বামী বিভু চৌধুরী তখন বাসার গেট লাগাতে বাইরে গিয়েছিলেন। তার তিন মেয়ে পাশের কক্ষে ছিল। স্বামী গেট লক করে ফিরতে ফিরতেই ঝর্ণা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
ঝর্ণা চৌধুরীর স্বামীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে চাওয়া হয়েছিল, হতদরিদ্র এই পরিবারে এত কেরোসিন কোথা থেকে এলো? বিভু চৌধুরী জানান, তিনিই কেরোসিন এনে রেখেছেন। সবসময় হাতে টাকা থাকে না, এ জন্য একসঙ্গে বেশি কেরোসিন এনে রেখেছিলেন বিদ্যুৎ না থাকলে হারিকেন দিয়ে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য।
ওই মহল্লার বাসিন্দা এক ব্যক্তি জানান, ঝর্ণা চৌধুরীর লাশ বারান্দায় পাওয়া গেছে। সেটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। আবার একজন নারী রাত ৯টায় এভাবে মারা গেলেন, আগুনে পোড়ার সময় চিৎকার আশপাশের কেউ শুনল না, এটি কীভাবে হয়?
নিহত ঝর্ণা চৌধুরীর তিন মেয়ে। তারা তিন বোনই বলছে, শরীরে আগুন লাগানোর আগে মা-বাবা তাদের শোবার কক্ষে একসঙ্গে ছিলেন। বাবা বিভু চৌধুরী কক্ষ থেকে বের হয়ে বাইরে গেট লাগাতে যাওয়ার পরেই মা ঝর্ণা চৌধুরী গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগান। এ সময় চিৎকার শুনে বাবাসহ তারা ৪ জন ছুটে গেলে দরজা বন্ধ দেখতে পান। দরজা ভেঙে ঝর্ণা চৌধুরীকে উদ্ধার করেন তারা। পরে তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঝর্ণার বড় বোন পান্না চক্রবর্তী দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি জানান, তার বোন ঝর্ণার সংসারে সবসময় অশান্তি লেগেই থাকত। তাদের অভাব-অনটনের সংসার। এজন্য প্রায়ই বাজার করে পাঠাতেন পান্না। তবু স্বামী বিভু চৌধুরী ঝর্ণাকে মানসিক নির্যাতন করতেন।
পান্না চক্রবর্তী বলেন, জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা হতো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। মাঝে মাঝে মেয়েদের ঘরের বাতি জ্বালাতেও বাধা দিতেন বিভু। বলতেন বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। মেয়েদের রাস্তায় বের করে দেওয়ার কথাও বলতেন। তিনি সবসময় পরিবারের প্রতি অমনোযোগী ছিলেন। আমাদের দুশ্চিন্তা এখন তিনটি মেয়েকে নিয়ে। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য বাসার জায়গা তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলেছি আমরা।
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বলেন, ঝর্ণা চৌধুরী জীবিত থাকার সময় মানসিক সমস্যার কথা শোনা যায়নি। এখন বলা হচ্ছে মানসিক সমস্যা ছিল তার। আমাদের এই সমাজে কোনো কারণে নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে পরিবার তাকে মানসিক রোগী বলে চালিয়ে দেয়। আর প্রেমের ঘটনায় যদি মারা যায়, তখন তাকে চরিত্রহীন বলা হয়। মেয়েরা নিজের ঘরেই নিরাপদ নয়। অনিরাপদ জীবনযাপন করে। ঝর্ণা চৌধুরীকে কেন মরতে হলো- এর জবার তার পরিবারকেই দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝর্ণা চৌধুরীর স্বামী বিভু চৌধুরী জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। বারান্দায় কেন কেরোসিন ঢেলেছিলেন স্ত্রী সেটি তিনি বলতে পারবেন না জানিয়ে বলেন, ঘটনার সময় তিনি বাসার বাইরে ছিলেন। তবে কোরোসিন কিনে আনার কথা স্বীকার করেন তিনি।
এএম/আরআর-০৫