জামালগঞ্জে জলাঞ্জলির মুখে সরকারি টাকা

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


মে ১০, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ১০, ২০২১
০১:৩৭ পূর্বাহ্ন



জামালগঞ্জে জলাঞ্জলির মুখে সরকারি টাকা
বিলম্বিত বিল ও নদী খনন

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় বিল খননের কাজ এখনও পুরোদমে শেষ করা হয়নি। আর বেহেলী বাড়ির লামা বিল ও ছয়হারা নদী খননের কাজ সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছালেও বাকিগুলোর কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।

উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত টাকায় মোট ৬টি ডোবা, বিল ও নদী খনন কাজের মধ্যে প্রায় ৪টির কাজ এখনও বাকি আছে। এর মাঝে দিরাই চাতল বিলের কাজ অধিকাংশই বাকি রয়ে গেছে। কাজের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কয়েকটিতে পুরোদস্তুর খনন কাজ শেষ না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃষ্টি শুরু হলে খননকৃত এসব জলাশয় পানিতে ভরে বাকি কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা জলে যাবে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

জামালগঞ্জ মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬টি নদী, ডোবা ও বিল খননের জন্য প্রায় ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মাঝে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ছয়হারা নদী খননের জন্য ১৯ লাখ ৬ হাজার টাকা, একই ইউনিয়নের নলচুল্লী বিল থেকে চানপুরের খাল পর্যন্ত ১৭ লাখ ৯ হাজার ৯০ টাকা, আবু মুন্সীর ডোবায় ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা ও মহিষাকুড়ি খালে ১৫ লাখ টাকা, বেহেলী ইউনিয়নের বাড়ির লামা বিল থেকে বৌলাই নদী পর্যন্ত ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং ভীমখালী ইউনিয়নের দিরাই চাতল লম্বা বিলে ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩৯ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

দিরাই চাতল বিল সংলগ্ন রসুলপুর গ্রামের মো. নূরুজ্জামান বলেন, 'লালপুরের এইদিকে কিছু মাটি কাটা হইছিল, এখন বন্ধ আছে। বৃষ্টি শুরু হইলে আর কাজ করা যাইত না।’

এ ব্যাপারে দিরাই চাতল বিল খনন কাজের দলনেতা মো. আলী হোসেনের মতামত জানতে তার সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

এদিকে ছয়হারা নদী খনন কাজের দলনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রীকান্ত তালুকদার দাবি করেন, 'আমাদের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে এবং এ কাজ দেখে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সীমা রানী বিশ্বাস, আমাদের ইউএনও মহোদয় ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ সবাই কাজ দেখে আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।'

বেহেলী বাড়ির লামা বিলের দলনেতা মো. রইছ উদ্দিন বলেন, 'আমাদের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, প্রকৌশলীসহ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খনন কাজ দেখে গেছেন এবং কাজের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিল খননের আগে ভরাট থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই কৃষকের জমি তলিয়ে যেত। এখন খনন করায় একদিকে মাছের বংশ বৃদ্ধি পাবে, আরেকদিকে কৃষকরাও উপকৃত হবেন।'

এ ব্যাপারে বেহেলী মশালঘাট গ্রামের কৃষক জয়ন্ত তালুকদার বলেন, 'লামা বিল খননের কাজ খুব ভালো হয়েছে। সরকার যে উদ্দেশে এটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সফল হবে। এই খননের ফলে মাছের বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি এখানকার কৃষকরাও লাভবান হবেন। কারণ আগে বৃষ্টি হলেই আমাদের জমিজমা তলিয়ে যেত। এখন বৃষ্টির পানি খননকৃত বিলে গিয়ে পড়বে। যে কারণে জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না।'

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, 'উপজেলার ৬টি বিল খনন কাজের মধ্যে ছয়হারা নদী ও বেহেলী লামার বিলের কাজ শতভাগ দৃশ্যমান হয়েছে। এর মধ্যে দিরাই চাতল বিলের কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। বাকি ৩টি অর্থাৎ মহিষাকুড়ির খাল, আবু মুন্সীর ডোবা ও নলচুন্নীর বিলের খনন কাজ মোটামুটি ভালো। তবে এজন্য খাল, বিল, ডোবা সংরক্ষণ কমিটিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। না হলে আগামী দিনগুলোতে এ জলাশয় রক্ষা করা সম্ভব হবে না।'

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা মোদক বলেন, 'বাড়ির লামা বিল ও ছয়হারা নদীর কাজ শেষ। দিরাই চাতল বিলের কাজ আপাতত বন্ধ আছে। এর জন্য এখন যারা নতুন ইজারা পেয়েছে (জামালগঞ্জ সদরের একটি সমিতি), তারা আগামী শনিবার থেকে কাজ শুরু করবে। প্রথম কিস্তির কাজ বাদে বাকি কাজ তারা করবে। এছাড়া মহিষাকুড়ির খাল, আবু মুন্সীর ডোবা ও নলচুন্নীর বিলে যতটুকু মাটি কাটার কথা ততটুকু হয়েছে। এখন বাকি যে কাজগুলো আছে, সেগুলো দ্রুতই শেষ হবে।'

উল্লেখ্য, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

 

বিআর/আরআর-১১