সুনামগঞ্জে ৫ বছর ধরে অচল হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


মে ২৪, ২০২১
১১:২২ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৪, ২০২১
১১:২২ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে ৫ বছর ধরে অচল হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনের রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার না থাকায় সেবাবঞ্চিত জেলার লাখো মানুষ। সেই সঙ্গে বর্তমানে হাসপাতালে থাকা ৩টি মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি এক্স-রে মেশিন বিকল হয়ে গেছে। শহরের সুধী সমাজ বলছেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বিষয়ে ডাক্তারের জন্য যোগাযোগ করা হলেও ডাক্তার পাঠানোর উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ এ বিভাগের ডাক্তার ছিলেন জুনিয়র রেডিওলজিস্ট ডা. সালেহ আহমদ আলমগীর। তিনি ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল অবসরে চলে যান। এরপর থেকে এক্স-রে মেশিন আর চালু করা হয়নি। পরে এ বিভাগে রেডিওগ্রাফার নিয়োগ হলেও অদৃশ্য কারণে সবাই বদলি হয়ে যান। এখন ৩টি এক্স-রে মেশিন থাকলেও একটি অকেঁজো হয়ে গেছে। বর্তমানে একটি এনালগ ও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন রয়েছে। এ দু'টি মেশিনও অচল অবস্থায় আছে।

শহরের সচেতন মহল বলছেন, জেলার ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৮ জন মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশ্রয়স্থল এই হাসপাতাল। এখানে ডাক্তার ও রেডিওগ্রাফার না থাকার ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এজন্য সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এলেও এক্স-রে করাতে হয় বাইরে। এতে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা গুনতে হয় রোগীদের। তাই কেন এত বছর ধরে এখানে ডাক্তার ও রেডিওগ্রাফার নেই তা তদন্ত হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা। 

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলো সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এত বছর ধরে কোন এক্স-রে হচ্ছে না? মেশিনগুলো এতদিন না চালানোর ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এখানে লোকবল না থাকার পেছনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে।

হবিগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ন্যাথানায়েল এডুউইন ফেয়ারক্রস সিলেট মিররকে বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও প্রায় ৫ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নেই। আসতেও দেওয়া হচ্ছে না। এর পেছনে বড় একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। আমরা দেখেছি সুনামগঞ্জ থেকে কয়েকদিন আগে ২০ দিনের মাথায় একজন সিভিল সার্জনকে বদলী করা হয়েছিল। এগুলো এ সিন্ডিকেটের অংশ হতে পারে। তাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তার আসুক এটা চায় না তারা। ছোট জেলা শহর হওয়ায় কেন্দ্রেরও এগুলো নজরে পড়ছে না। তাই সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা. আব্দুল হাকিম সিলেট মিররকে বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ২০১৬ সালে এ বিষয়ের ডাক্তার অবসরে যান। এরপর থেকে এক্স-রে মেশিন বন্ধ রয়েছে। অনেকদিন এ মেশিন না চালানোর ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন রয়েছে। এ মেশিন দিয়ে দেখে দেখে হাড় ভাঙলে জোড়া দেওয়া যায়। 

তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো গাফলতি নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রতিমাসে সিভিল সার্জন কোন কোন বিভাগে ডাক্তার নেই সে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার না থাকার ফলে এক্স-রে মেশিন নষ্ট হচ্ছে এ বিষয়টি এমপি, মন্ত্রীসহ সবাই জানেন। তবু কেন ডাক্তার আসছেন না সেটি মন্ত্রণালয় ভালো জানে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ড. আনিছুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার খুব তাড়াতাড়ি পাব আমরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন শামস উদ্দিন সিলেট মিররকে বলেন, তিনটি কেন, পাঁচটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও না চালালে নষ্ট হবে। আমরা এবাধিকবার মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি, ডিও লেটার দিয়েছি। বিষয়টি মন্ত্রী, এমপি সবাই জানেন।


এএম/আরআর-০১