জামিন পেলেন ১৮ আসামি, পাননি কেবল ঝুমন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


মে ২৮, ২০২১
১২:৪৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৮, ২০২১
১০:০৯ অপরাহ্ন



জামিন পেলেন ১৮ আসামি, পাননি কেবল ঝুমন
শাল্লায় তাণ্ডব

ঝুমন দাস

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে তাণ্ডবের ঘটনার এজাহারভুক্ত ১৮ আসামি জামিন পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ আসামি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়েছেন এবং দুই আসামি কারাগারে ছিলেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ পাল তাদের জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। এ ঘটনায় দায়ের করা আরেক মামলার আসামি ঝুমন দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান সিকদার জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। 

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সমর্থকরা গত ১৭ মার্চ হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করে নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৮টি বাড়িতে। এ সময় গ্রামের ৫টি মন্দিরও ভাঙচুর করে তারা। নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস আপন নামের এক তরুণের ফেসবুক আইডি থেকে মাওলানা মামনুল হককে কটাক্ষ করে দেওয়া কথিত স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় ওইদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এই তাণ্ডব চালানো হয়। এ ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এই চার মামলায় এ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় হাজির হওয়াসহ ৯৪ জন আইনের আওতায় এসেছেন।

বৃহস্পতিবার ১৬ জন আসামি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হন এবং আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন। একই সময়ে জেল হাজতে থাকা দুই আসামির পক্ষেও তাদের আইনজীবী জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত ১৮ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এরা সকলেই এজাহারনামীয় আসামি।

কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. সেলিম নেওয়াজ জানান, নোয়াগাঁওয়ের ঘটনায় এজাহারনামীয় ১৮ আসামি জামিন পেয়েছেন। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় আদালতের কাছে ১৬ জন আত্মসমর্পণ করেন এবং জেল হাজতে ছিলেন দুইজন। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, ইবাব মিয়া, সাচ্ছাদুল, সাইফুল, রমজান, ফকর উদ্দিন প্রকাশ ফফরুন মিয়া, ইনাত আলী, মির্জা হোসেন, নেহার আলী, ইয়ালিস মিয়া, সবুজ মিয়া, খাজুল মিয়া, ইয়াসিন মিয়া, কবির মিয়া, রাজন মিয়া, এনাম মিয়া, কেরামত আলী, কাশেম ও রাকিব।

এ ঘটনার আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া ঝুমন দাশেরও বৃহস্পতিবার জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী দেবাংশ শেখর দাশ। জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান সিকদার ঝুমনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।

অ্যাডভোকেট দেবাংশু শেখর দাস জানান, এর আগে দুইবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহা ও বেলায়েত হোসেনের আদালতে ঝুমন দাসের জামিনের আবেদন করেন তিনি। সেখানে জামিন না পেয়ে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান সিকদারের আদালতে বৃহস্পতিবার জামিন প্রার্থনা করেন। গত ১৮ মে জামিন শুনানির চেষ্টা করলে আদালত তা স্থগিত করেন। এরপর বৃহস্পতিবার আদালত জামিন নামঞ্জুর করলেন। এবার উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান তিনি। 

এদিকে ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তার দাবিতে সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের পৌরমার্কেটে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যামপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন (রিও) এবং ক্যাম্পেইন ফর প্রোটেকশন রিলিজিয়াস মাইনোরিটিজ ইন বাংলাদেশ (সিপিআরএমবি)।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রিসার্চ অ্যান্ড অ্যামপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশনের (রিও) চেয়ারম্যান প্রফেসর চন্দন সরকার, সেক্রেটারি রাজেশ নাহা-ইয়োখ ও অ্যাডভোকেট দেবাংশু শেখর দাস। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চলতি বছরের ১৭ মার্চ ঝুমন দাসের মোবাইল থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অসংখ্য বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে ঝুমন দাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু ঝুমন দাস এখনও মুক্তি পাননি। বার বার আদালতে জামিন চাওয়া হলেও তার জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। আমরা ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ তার জানমালের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঝুমন দাশের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস। তিনি বলেন, আমার স্বামী ঝুমন দাসের কোনো অপরাধ নেই। তবুও তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমার কোলে রয়েছে ৯ মাসের শিশুসন্তান। সে বার বার তার বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাবার আদর-সোহাগ না পেয়ে কেঁদে কেঁদে দিন কাটাচ্ছে। আমার সন্তানের দিকে চেয়ে আদালতের কাছে আমার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

ঝুমন দাসের মা নিভা রাণী দেবী বলেন, ছেলে কারাগারে থাকায় আমার চোখে ঘুম আসে না। খেতে মন চায় না। আমার বুক ফেটে যায়। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলে ঝুমনের? অন্যান্য অপরাধীরা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আমার ছেলে এখনও কারাগারে। আমি মা হয়ে তা সইতে পারছি না। আমার ছেলের মুক্তি চাই।


এএম/আরআর-০৬