জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
মে ২৮, ২০২১
১১:১৫ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ২৮, ২০২১
১১:১৫ অপরাহ্ন
জিয়াউর রহমান
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে জামালগঞ্জ প্রেসক্লাব থেকে মো. জিয়াউর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে জামালগঞ্জ থানায় মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করায় ক্লাবের কার্যনির্বাহী সভায় ক্লাব সদস্যদের দুই তৃতীয়াংশ মতামতের ভিত্তিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, বহিষ্কৃত জিয়াউর রহমান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওয়ালী উল্লাহ'র বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে কথিত নিউজ পোর্টালে সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন। এ নিয়ে সাংবাদিকসহ উপজেলার সচেতন মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জিয়াউর রহমানের বহিষ্কারাদেশকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ১২ জন সদস্য সম্বলিত জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার সভাপতি নির্বাচিত হন। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে সর্বাধিক ৬ ভোট পেয়ে নিজাম নুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া ৪ ভোট পেয়ে মো. দিল আহমদ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং নিজের ভোটসহ ২ ভোট পেয়ে বহিষ্কৃত জিয়াউর রহমান তলানিতে অবস্থান করেন। মূলত সাধারণ সম্পাদক পদের খায়েশ পূরণ করতে না পারায় তার মাঝে তীব্র জীঘাংসা কাজ করছিল। সেই ক্ষোভ সামলাতে না পেরে পূর্বের বহিষ্কৃত মো. আব্দুল আহাদ ও তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপসহ সুযোগসন্ধানী আরও কয়েকজনের প্ররোচণায় বর্তমান সভাপতি ওয়ালী উল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের মালামাল চুরির মিথ্যা অপবাদে জামালগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু বহিষ্কৃত জিয়াউর রহমান প্রেসক্লাবের মালামাল চুরির যে অভিযোগ এনেছেন তা মিথ্যা। প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্লাবের পূর্ব ভাড়াটে কার্যালয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কমিটির দায়িত্বশীলদের মতামত নিয়ে সম্পূর্ণ দিনের আলোয় জামালগঞ্জস্থ হাজী মার্কেটের নতুন ভাড়াকৃত কার্যালয়ে চেয়ার, টেবিল, আলমীরাসহ আনুষাঙ্গিক সকল মালামাল স্থানান্তর করেন। মালামাল স্থানান্তর করার বিষয়টিকে পুঁজি করে জিয়াউর রহমান, আব্দুল আহাদ ও প্রদীপ গংরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. দিল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান তালুকদার, অর্থ সম্পাদক মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিশ্বজিত রায় ও সদস্য মহসিন কবীর জানিয়েছেন, প্রেসক্লাবের মালামাল চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা ডাহা মিথ্যা।
জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিজাম নুর বলেন, জিয়াউর রহমান প্রেসক্লাবের সভাপতির বিরুদ্ধে মালামাল চুরির যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরোনো অফিস থেকে নতুন অফিসে মালামাল স্থানান্তর করা হয়েছে। এ সময় আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। অর্থাৎ মালামাল চুরির প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করায় প্রেসক্লাব থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অভিযোগের এক নম্বর সাক্ষী ও পূর্বের ঘরের মালিক সুকেশ কর বলেন, সাক্ষীর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তাছাড়া মালামাল চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি জানুয়ারি মাস থেকেই আমার ঘর ছাড়ার জন্য প্রেসক্লাবের সবার কাছে অনুরোধ করে আসছিলাম। তারই প্রেক্ষিতে নতুন অফিসে মালামাল সরানো হয়েছে। পরে আমার ঘরের চাবি আমাকে দেওয়া হয়।
অভিযোগের অপর সাক্ষী বাদল কৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, তিনি এ ক্লাবের কোনো সদস্য নন। অভিযোগে তাকে যে সাক্ষী করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক ও বর্তমান নির্বাহী সদস্য আকবর হোসেন জানিয়েছেন, অঞ্জন পুরকায়স্থ ও প্রয়াত হুমায়ুন কবীরের সময়কালে অর্থ আত্মসাতের দায়ে আব্দুল আহাদকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অঞ্জন পুরকায়স্থ ও আকবর হোসেনের সময়ে তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপকে গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে ওয়ালী উল্লাহ ও নিজাম নুর সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্বপালন করছেন। এ কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই পুরোনো অফিস থেকে নতুন অফিসে মালামাল স্থানান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। অতীতে অভিযুক্তদের যেভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবারও অধিকাংশ সদস্যের মতামত নিয়ে জিয়াউর রহমানকে বহিষ্কার করা হলো।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার বলেন, পূর্বের কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকসহ অধিকাংশ সদস্যের পরামর্শ এবং পূর্বের ঘর মালিকের অনুরোধক্রমে আমি, সাধারণ সম্পাদক ও কয়েকজন মিলে নতুন অফিসে মালামাল স্থানান্তর করি। কিন্তু এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী জিয়াউর রহমানের বহিষ্কার সম্বলিত প্রেসক্লাবের ৮ জন স্বাক্ষরিত একটি রেজুলেশনও পেয়েছি। এ নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাবটি সুনামের সঙ্গে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অতীতে ক্লাবের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে যে বা যারা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে গঠনতন্ত্রের আলোকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি বহিষ্কৃত জিয়াউর রহমানসহ পূর্বের বহিষ্কৃতরা মিলে জামালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সুনাম ও ঐতিহ্য বিনষ্টে উঠেপড়ে লেগেছেন। প্রেসক্লাব সভাপতির ওপর দায়েরকৃত অভিযোগ তারই প্রমাণ বহন করে।
বিআর/আরআর-০১