লকডাউন উপেক্ষা করে সীমান্তে চলছে চোরাকারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৩, ২০২১
০৫:৪১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৩, ২০২১
০৫:৪৩ অপরাহ্ন



লকডাউন উপেক্ষা করে সীমান্তে চলছে চোরাকারবার

করোনার সংক্রমণ কমিয়ে আনতে দেশের সব সীমান্তে মানুষ পারাপারে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এমনকি বৈধভাবে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতেও মানা হচ্ছে বিধিনিষেধ। কিন্তু জৈন্তাপুর উপজেলার সবক'টি সীমান্ত দিয়ে করোনাকালীন লকডাউন অমান্য করে চোরাচালানের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করছে চোরাকারবারিরা।

সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ওই দেশের গরু, মহিষ, কসমেটিকস, নিষিদ্ধ শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট, ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ইয়াবা, গাড়ির যন্ত্রাংশ, টায়ার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাকা, বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল হ্যান্ডসেট, নিম্নমানের চা-পাতা, মোটরসাইকেল, বিভিন্ন কোম্পানির বিস্কুট এবং ভারতীয় শাড়ি। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হচ্ছে আমদানিকৃত মটরশুঁটি, সুপারি, প্লাস্টিক সামগ্রী এবং স্বর্ণের বার। আর এসব কাণ্ডে স্থানীয়দের অভিযোগের তীর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিকে। 

জানা গেছে, এই চোরাচালান ব্যবসায় অন্যতম সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য উপজেলার হরিপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিক আহমদ ওরফে লোদাই হাজী, হেলাল আহমদ, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, মো. আলী, মো. আব্দুল্লাহ, সুইট ফারুক, আজির রহমান, মো. ইব্রহিম আলী, দরবস্ত মানিকপাড়া গ্রামের বিলাল আহমদ, লালাখাল গ্রামের সামসুজ্জামান সেলিম, জালাল উদ্দিন, লালাখাল কালিঞ্জিবাড়ী গ্রামের রহিম উদ্দিন, ৪ নম্বর বাংলাবাজারের জামাল আহমদ, আলুবাগান গ্রামের কবিরাজ ফারুক, ঘিলাতৈল গ্রামের আব্দুল করিম ওরফে বেন্ডিজ করিম, কেন্দ্রির মির্জান আহমদ রুবেল ও হরিপুর শ্যামপুর গ্রামের জিগা মোল্লা। 

বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক স্থলবন্দর শর্তসাপেক্ষে চালু রাখা হলেও কোভিড পরিস্থিতিতে সীমান্তের সবক'টি পথ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে জৈন্তাপুর উপজেলার চোরাচালান ব্যবসার অন্যতম সিন্ডিকেট চক্রের ১৭ জন সদস্যের মাধ্যমে শত শত বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য বানের পানির মতো নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে এদেশের পণ্য।

সীমান্তের যেসব স্থান দিয়ে এসব চোরাচালান চলছে তাঁর মধ্যে আছে নলজুরী, আলু বাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আসামপাড়া, ছাগল খাউরী, মিনাটিলা, রাবার বাগান, কাটালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, ডিবির হাওর (আসামপাড়া), ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা (সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র), কমলাবাড়ি, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম, কালিঞ্জীবাড়ী, জালিয়াখলা, বড়গাং নদীর উৎসমুখ, সারী নদীর মুখ, লাল মিয়ার টিলা, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, আফিফানগর, তুমইর, ইয়াংরাজা, বালিদাঁড়া, সিঙ্গারীরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১২০টি চোরাই পথ। এসব পণ্য আদান-প্রদানে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র সদস্য ও তাদের সোর্সরা সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা বাংলাদেশের ভেতরে যে সকল রুট ব্যবহার করে সেগুলো হলো- উপজেলার হরিপুর বাজার, দরবস্ত বাজার, জৈন্তাপুর বাজার, আলুবাগান, শ্রীপুর, আদর্শগ্রাম টু সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক হয়ে দরবস্ত ও হরিপুর বাজার, ফুলবাড়ী, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, গোয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, জালিয়াখলা টু জৈন্তাপুর বাজার, লালাখালে নাজিমগড় রিসোর্টের সম্মুখ হতে লালখাল-সারীঘাট টু দরবস্ত হরিপুর বাজার, লালাখাল-কেলেসিং বাজার টু দরবস্ত বাজার, লালাখাল-বালিদাঁড়া-ইটাখাল টু চতুল বাজার হয়ে সিলেট-কানাইঘাট রোড দিয়ে দরবস্ত টু হরিপুর বাজার। 

উপজেলার সচেতন মহলের মতে, ১৭ জন চোরাই পণ্যের ব্যবসায়ী স্থানীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় সরকার ঘোষিত সীমান্ত লকডাউন অমান্য করে চোরাকারবার পরিচালনা করছে। তাদের দ্রুত কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। 

এ বিষয়ে জানতে ১৯ বিজবির লালাখাল বিওপি কমান্ডারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।

জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের পর থেকে টিম গঠন করে কাজ করছি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী আন্তরিক না হলে চোরাচালান রোধ করা কঠিন হবে।


আরকে/আরআর-০১