চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৪, ২০২১
০৮:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
০৯:৫৮ অপরাহ্ন



চায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা
সিলেটে আশানুরূপ বৃষ্টি নেই

এক বছর আগে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ শঙ্কার কারণ- চলতি বছর সিলেটে পরিমাণের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

১৬৭ বছর আগে ১৮৫৪ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে দেশে উৎপাদনে আছে ১৬৬টি চা বাগান। যার মধ্যে ১৩৫টি চা বাগানই সিলেট বিভাগে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ২৪টি এবং সিলেট জেলায় ১৯টি চা বাগান রয়েছে। অথচ, এ বছর চা শিল্পের রাজধানীখ্যাত সিলেটে বৃষ্টি নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। 

আবহাওয়া অফিস সিলেট ও শ্রীমঙ্গলের তথ্য অনুযায়ী এ বছর পরিমাণের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরের চেয়েও অনেক কম বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, গত মে মাসে ৫৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়া কথা ছিল। শহর ও আশপাশে রেকর্ড করা বৃষ্টির পরিমাণ ৩৪২ মিলিমিটার। এপ্রিল মাসে ৫শ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৪২ মিলিমিটার। 

অপরদিকে, শ্রীমঙ্গল অফিসের পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান জানান, মে মাসের মধ্যে শ্রীমঙ্গলে ২৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মাত্র ১৫ দিন সেখানে বৃষ্টি হয়েছে। 

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, মে মাসের ২২ দিন সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ৩১ মে ৭৫ মিলিমিটার, ১৮ মে ৪৫ মিলিমিটার এবং ১৪ মে ৪২ মিলিমিটার। 

সিলেট আবহাওয়া অফিস এবং শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে পুরো মে মাসজুড়ে রেকর্ড করা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৬৫ মিলিমিটার এবং ২৩৬ মিলিমিটার। 

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ২০২০ সালে মোট উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি চা (৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি)। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল তবে কোভিড সংক্রমণের বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন কেজি। 

এর আগের বছর (২০১৯ সালে) রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন বাংলাদেশে। ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয় ঐ বছরে। যা দেশের চা শিল্পের ১৬৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। সে বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৬ মিলিয়ন কেজি চা (৭ কোটি ৬০ লাখ)। 

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি জি এম শিবলি জানান, এ বছর খরায় পড়ছে চা শিল্প। বৃষ্টিপাতের ধারাবহিকতা বজায় না থাকলে চায়ের জন্য সুফল আসবে না। খরা ও অতিবৃষ্টি দুটোই চায়ের জন্য হুমকি। এ বছরের শুরুটা হয়েছে খরা দিয়ে। পরবর্তী মাসগুলোতেও ধারাবাহিক বৃষ্টি হলে চায়ের মোট উৎপাদন কিছুটা বাড়বে। 

জিএম শিবলি আরও বলেন, ‘চা বাগানের রেকর্ড অনুয়ায়ী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১ দশমিক ৫৪ ইঞ্চি, মার্চে ১ দশমিক ১৭ ইঞ্চি, এপ্রিল মাসে ৩ দশমিক ৮৩ ইঞ্চি এবং মে মাসে ১২ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ, এই বছর ফেব্রুয়ারিতে কোনো বৃষ্টিই হয়নি। মার্চে ১ দশমিক ৫৪ ইঞ্চি, এপ্রিলে দশমিক ৮৮ ইঞ্চি এবং মে মাসে ৭ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা হলে চা উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।’

চা বাগানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৯ সালে রেকর্ড উৎপাদন হলেও ২০২০ সালেই উৎপাদন কমেছে। এ বছর বৃষ্টি হচ্ছে না। আদৌ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। 

এদিকে, চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদেরও মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ উন্নত পরিবেশে জীবনযাপনের বিষয়টি উপেক্ষিত। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কর্মবিরতিতে গেলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

আরসি-১০