কৃষকের বাড়তি আয় হাওরের 'ডেমি ধানে'

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ


জুন ০৭, ২০২১
০৯:২৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৭, ২০২১
০৯:২৯ অপরাহ্ন



কৃষকের বাড়তি আয় হাওরের 'ডেমি ধানে'

সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে এখন শুরু হয়েছে ডেমি ধান কাটা। ডেমি ধান কাটতে প্রতিদিনই কৃষকরা হাওরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যান্য বছর থেকে এবার ডেমি ধান কম হলেও সন্তুষ্ট কৃষকরা। তারা বলছেন, আর কয়েকদিন এ ডেমি ধান কাটতে পারলে কয়েক মাসের খোরাক হয়ে যাবে তাদের।

হাওর-বাওরের জেলা সুনামগঞ্জের কৃষকদের দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়। এক ফসলি বোরো ধানের এলাকায় প্রায়ই বন্যা ও খরায় ফসলহানি হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ফসল তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। এর ধারাবাহিতকতায় এবারও সোনার বৈশাখ পেয়েছেন তারা। কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া বৈশাখ মাসেই ক্ষেতের ধান গোলায় তুলতে পেরেছেন। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে জেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কৃষক পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জে প্রতিটি হাওরে এবার বৈশাখের শুরুতে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়। যদিও জেলা প্রশাসন চৈত্র মাসের শেষের দিকে উৎসবের মধ্য দিয়ে ধান কাটা শুরু করে দেয়। শুরুতে শ্রমিক সংকট থাকলেও উন্নতমানের হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার ও বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আনায় কোনো সমস্যা হয়নি কৃষকদের। তাই বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। ধান কেটে নেওয়া এসব ক্ষেতে নতুন করে ধান জন্মিয়েছে এখন। ধান কাটা শেষ হওয়া ক্ষেতে নতুন করে জন্মানো এই ধানকে বলা হয় ডেমি। ক্ষেত থেকে কেটে মাড়াই, শুকানো ও সিদ্ধ করতে হয় এ ধানকে। যারা এ ধান কাটছেন তারা এখনও ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরে।

শাল্লা উপজেলার কৃষক মো. ছত্তার মিয়া বলেন, আমি ৯০ কিয়ার জমিতে ধান চাষ করেছি। বৈশাখ মাসেই ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এখন জমিতে ডেমি হয়েছে। প্রতিবছর ক্ষেতে এ ডেমি ধান হয়। তবে কাটা যায় না। কারণ অন্য বছর বৈশাখ মাসের শেষের দিকে হাওরে পানি চলে আসে। এবার এখনও পানি আসেনি। আমার জমিতে এখন ডেমি ধান কাটা হচ্ছে।

জামালগঞ্জ উপজেলার কাজিরগাঁও গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন ও মো. জারু মিয়া এবার হাসকার হাওরে ডেমি ধান কাটছেন। তারা বলেন, প্রায় ১০ দিন হাওরে ডেমি ধান কেটেছি। একেকজনের প্রায় ১০ মণ করে ধান হয়েছে। আর কয়েকদিন কাটতে পারলে কয়েকমাসের খাবারের জন্য আর চিন্তা করা লাগবে না বলে জানান তারা।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ডাকুয়ার হাওরের কৃষক মাহমুদুল হাসান বলেন, অন্য বছর আরও বেশি ডেমি ধান কাটা গেছে। এবার কম হয়েছে। যা হয়েছিল তা গরু নষ্ট করে দিচ্ছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফরিদুল হাসান বলেন, এ বছর হাওরে ডেমি ধান কম হয়েছে। বড় কৃষকরা এসব ডেমি ধান কাটেন না। হাওরের গরিব কৃষকরা কিছু ডেমি ধান কেটেছেন। তবে অনেক হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এবার আর ডেমি ধান কাটা যাবে না।

প্রসঙ্গত, এবার সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। হাওর থেকে কৃষকের এই ধান তুলতে ৮ হাজার ৫০০ বেপারি বাইরের জেলা থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ ৮৫ হাজার আঞ্চলিক বেপারি হাওরে কাজ করেছেন। এ বছর ধান উৎপাদন হয়েছে ১৪ লাখ মেট্রিক টন।


এএম/আরআর-০১