দোয়ারায় মেরামতহীন সড়কে নাকাল অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

মো. হাবিবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার


জুন ০৮, ২০২১
১০:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৮, ২০২১
১০:০৪ অপরাহ্ন



দোয়ারায় মেরামতহীন সড়কে নাকাল অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোয়ারাবাজার-বোগলা সড়কটি পথচারীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর আকস্মিক বন্যায় পানির তীব্র স্রোতে সড়কটির সুরমা ইউনিয়নের মহব্বতপুর মোকাম এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়। মেরামতের অভাবে সড়কের এই অংশটি এখন বড় খালে পরিণত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।

এলজিইডি'র আওতাধীন দোয়ারাবাজার-বোগলা সড়ক দিয়ে বোগলা ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী সুরমা ও বাংলাবাজার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ উপজেলা সদর, জেলা সদর ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে নবনির্মিত বাগানবাড়ি বর্ডার হাটের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সড়ক। দুর্গম সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবার কাজসহ দৈনন্দিন কাজে যোগাযোগের জন্য এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এখন বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক দাবির পরেও এখনও কোনো ধরনের মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে লোকজনকে সড়কের ভাঙা অংশে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ভাঙা সড়কে পারাপারের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কাঠের সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত ও গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে নির্মিত কাঠের এই সেতুটি ইজারা দিয়েছে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে হাওরের পানি চলাচল সড়কের এই অংশে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিবছরই এখানে ভাঙন দেখা দেয়। যে কারণে সড়কের এই অংশ কোনোভাবেই টেকানো যাচ্ছে না। সড়কটি টিকিয়ে রাখতে ভাঙা অংশে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ করা জরুরি।

বোগলা ক্যাম্পের ঘাট গ্রামের বাসিন্দা নূর আলম বলেন, এটি কোনো নদী-নালা কিংবা খাল নয়। এটি আমাদের সড়ক। প্রায় এক বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা যেন ছিটমহলের বাসিন্দা। ভোটের সময় সব নেতারা আমাদের কাছে আসেন, কিন্তু আমাদের এই জনদুর্ভোগ নিয়ে এখন তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। এ বিষয়ে সব নেতারা নীরব।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাব্বির আকন্দ বলেন, ভঙ্গুর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসার মালামাল আনতে বাড়তি টাকা ও সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে আমরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি।

রোসমত আলী রাসসুন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মো. জামাল মিয়া বলেন, সবসময় এই রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। শিক্ষার্থীরাও এদিক দিয়ে আসা-যাওয়া করে। সড়কটি মেরামত করা জরুরি।

এ ব্যাপারে সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মামুনুর রশীদ বলেন, সড়কটি ভাঙার পর পরই এলজিইডি অফিসকে অবহিত করেছি। আপাতত সড়কের এই ভাঙা অংশে পারাপারের সুবিধার্থে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাঠের সেতু নির্মাণ করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এখানে পারাপার ফ্রি। শুধু গাড়ি পারাপারের ক্ষেত্রে টোল আদায় করতে বলা হয়েছে।

বোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, সড়ক দিয়ে চলাচল করতে ট্যাক্স দিতে হয়। সাধারণ মানুষরা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় দোয়ারা-বোগলা সড়কের বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেছি। সাধারণ মানুষ যে কতটা কষ্টে আছে এদিক দিয়ে যাতায়াত না করলে বোঝা যাবে না। সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে দোয়ারাবাজারের এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল সিলেট মিররকে বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই সড়কটিকে একটি বন্যা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে এখানে সেতুর চাহিদা দিয়েছি। কিন্তু ওই এলাকার লোকজন এখানে সেতু চান না। তাদের দাবি- এখানে সেতু হলে নাকি বন্যার সময় তাদের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করবে, ফসলি জমি তলিয়ে যাবে। তারা শুধু প্রটেকশন চাইছেন। কিন্তু এখানে তো প্রটেকশন টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কারণ প্রতিবছর যে পাহাড়ি ঢল নামে, তাতে ঢলের পানি এখানে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যে কারণে প্রত্যেকবারই এখানে ভাঙন দেখা দেয়।


এইচএইচ/আরআর-০১