দ. সুনামগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


জুন ১১, ২০২১
০৮:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১১, ২০২১
০৮:১৯ অপরাহ্ন



দ. সুনামগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। 


অভিযোগে বলা হয়, গ্রামবাসীর টাকায় করা রাস্তার কাজ দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন মো. মনির উদ্দিন।  


এ ঘটনায় গত বুধবার (০৯ জুন) প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সিদখাই গ্রামের মৃত হাজী আব্দুর রহমানের ছেলে মনু মিয়া। 


লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সিদখাই গ্রামের জনসাধারণ গ্রামের আয় ও মসজিদের ফান্ডের টাকা দিয়ে সিদখাই জামে মসজিদ থেকে শফিকুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শত মিটার রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেন পুরো গ্রামবাসী। 


অন্যদিকে গ্রামের মনু মিয়ার বাড়ি থেকে সিদখাই জামে মসজিদের সামন পর্যন্ত প্রায় ১শত মিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ করেন গ্রামের মনু মিয়া। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন গ্রামের এই সমস্ত কাজ দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) সাধারন কর্মসূচির আওতায় উপজেলাওয়ারী ১ম পর্যায় নন-সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে দর্গাপাশা ইউনিয়নের “৫নং ওয়ার্ডের সিদখাই গ্রামের মনু মিয়ার বাড়ি হতে স্কুলের রাস্তা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট” নামে একটি প্রকল্প দেওয়া হয়। 


এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ২লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। 


বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিদখাই গ্রামের প্রধান রাস্তা শফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে সিদখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে সিদখাই জামে মসজিদ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ শত মিটার রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। সেই সাথে মসজিদের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রামের প্রধান রাস্তা থেকে মনু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত আরো ১শত মিটার মাটির রাস্তা মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে।


দরগাপাশা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সিদখাই গ্রামেরবাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, গ্রামের প্রধান রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে ছিলো, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বর্ষাকালে স্কুলে যেতে পারে না, আমরা মসজিদে ও বাজারে যাতায়াত করতে পারি না। আমাদের গ্রামের লোকজন যাতায়াতে চরম দূর্ভোগে ছিলেন। গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাগবে আমরা সবাই ঐব্যবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেই আমরা আর অপেক্ষা করবো না, এবার গ্রামের রাস্তাটি আমাদের নিজেদের টাকায় সম্পন্ন কবরো। আর সে লক্ষেই আমরা গ্রামবাসী মিলে সকল পরিবারে নির্ধারিত হারে আমরা চাঁদা করে টাকা সংগ্রহ করি, সেই সাথে গ্রামের একমাত্র মসজিদ ফান্ড থেকেও টাকা সংগ্রহ করে শফিকুল ইসলামের বাড়ির সামন থেকে মসজিদ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শত মিটার রাস্তায় মাটি ভরাট করেছি। সম্পূর্ণ নিজেদের টাকায় আমরা এই রাস্তা নির্মাণ করেছি। 


সিদখাই জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী কদ্দুস আলী জানান, রাস্তায় সরকারি বরাদ্দ না পেয়ে আমরা গ্রামবাসী মিলে চাঁদা করে ও মসজিদ ফান্ডের টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করেছি। তিনি আরোও বলেন, গ্রামের প্রধান রাস্তা আমরা সবাই মিলে নিজেদের টাকায় নির্মাণ করলেও মনু মিয়ার বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত প্রায় ১শত মিটার রাস্তায় মাটি ভরাট করেছেন মনু মিয়া। এই খানেও কোন সরকারি টাকা দেওয়া হয়নি। 


এখন শুনতে পাচ্ছি মনু মিয়ার বাড়ি হতে স্কুলের রাস্তা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট বাবত সরকারি ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 


আর এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন। তিনি জানান, আমরা গ্রামবাসী ও মনু মিয়ার সরকারি বরাদ্দের কোন টাকা পাইনি। 


গ্রামের আফজাল মিয়া, মধু মিয়া, মজমিল হক, আনোয়ার আলী, আলতাব আলী, আব্দুল আলী, আসাদ আলী, তোরাব আলী সহ অনেকেই জানান, সরকারি কোন টাকা আমরা গ্রামবাসী পাননি, তাদের নিজেদের টাকায় প্রধান রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন, মনু মিয়ার রাস্তাটিও মনু মিয়া নিজের টাকা দিয়ে নির্মাণ করেছেন। তবে মনু মিয়ার রাস্তায় ইউপি চেয়ারম্যান বলছিলেন সরকারি বরাদ্দ দিবেন, আর এটা বলেই তিনি মনু মিয়াকে দিয়ে মনু মিয়ার নিজেস্ব টাকায় এই রাস্তা বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান মনু মিয়াকে কোন টাকা দেননি। এখন দেখা যাচ্ছে, এই রাস্তায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ এসেছিলো। প্রকল্পের টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে। পরে জানা গেছে, চেয়ারম্যান নিজেই এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গ্রামের কাউকে তিনি কোন টাকা দেননি।    


অভিযোগকারী মনু মিয়া জানান, আমার বাড়ীর দক্ষিণ পাশের্^ প্রায় ৫০ টি পরিবার আছে এবং হাটি বাড়ী হিসাবে লোকজন বর্ষা মৌসুমে আমার বাড়ীর উপর দিয়ে মসজিদের পাশ হয়ে গ্রামের প্রধান রাস্তায় চলাচল করে থাকে। চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেছিলাম রাস্তাটি করে দেয়ার জন্য। তখন তিনি আশ্বস্ত করে  বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার কাছ থেকে কাজ করিয়ে ফেল, জুন-জুলাইয়ে সরকারি বরাদ্দ আসলে তোমাকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে দিবো। আমি সেই অনুমানে ধার দেনা এবং গ্রামের আরো লোকজনদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার কাজ করিয়েছি। কাজ করার পর একাধিকবার যোগাযোগ করি। পরে আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার এই প্রকল্পের ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পরোটাই চেয়ারম্যান তার ইউপি সদস্য মিলে আত্মসাৎ করেছেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’


ইউপি মেম্বার সমুজ আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পের পিআইসি কমিটির সভাপতি আমি, আমি নিজেই মনু মিয়াকে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা দিয়েছি।’ 


তবে কোন ডকুমেন্ট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, টাকা দেওয়ার কোন ডকুমেন্ট নাই। তবে পিআইসি কমিটির সভাপতি আমি থাকলেও কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন মনু মিয়া নিজেই। 


দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, মনু মিয়া রাস্তার জন্য আমার কাছে দাবী করেছিলেন। টাকাটা ইউপি সদস্যের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। 


দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘এ সংক্রান্তে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একটি কমিটি গঠন করে তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগের সত্যতা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’




এস টি/বি এন-০৩