ধর্মপাশা প্রতিনিধি
জুন ১১, ২০২১
১১:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ১১, ২০২১
১১:০৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামের সামছুন্নাহার (৫৫) নামের এক বিধবা নারীর স্বপ্ন আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১১ জুন) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে অগ্নিকাণ্ডে তার নিজ বসতঘর লাগোয়া গোয়ালঘরের ভেতরে থাকা একটি গর্ভবতী গাভী ও একটি খাসিসহ গোয়ালঘরটি আগুনে পুড়ে যায়। এতে সবমিলিয়ে তার ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ওই নারী। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত ওই বিধবা নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামছুন্নাহারের স্বামী আব্দুল খালেক দুই ছেলে সন্তান রেখে প্রায় ১৮ বছর আগে মারা যান। বড় ছেলে নজরুল ইসলাম বিয়ে করে এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে ৮ বছর আগে মারা যান। ওই বিধবা নারীর ছোট ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৩০) স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পৃথক হয়ে এলাকা ছেড়ে ৫/৬ বছর আগে কাজের সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। এ অবস্থায় বড় ছেলের দুই সন্তান ও পুত্রবধূর দায়িত্ব কাঁধে চেপে বসে বিধবা সামছুন্নাহারের। অন্য কোনো উপায় না থাকায় কিছু টাকা ধার-দেনা করে নিজ বাড়ির সামনে চা, বিস্কুট, মোমবাতি ও গোলাপজলের একটি দোকান দেন ওই বিধবা নারী। বছর খানেকের মধ্যেই ধার-দেনার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। দুই নাতির লেখাপড়ার খরচ চালানোসহ খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে সংসারের খরচ মিটিয়ে ২ বছর আগে তিনি একটি বকনা বাছুর ও একটি খাসি কেনেন। সেই বকনা বাছুরটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে পাঁচ মাসের গর্ভবতী হয়। খাসিটিও বড় হয়ে যায়। বসতঘরের পাশেই টিনের চালার গোয়ালঘর করে সেখানে গর্ভবতী গাভী ও খাসিটি রেখে এই এদের লালন-পালন করে আসছিলেন সামসুন্নাহার। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট হওয়া আগুনে গর্ভবতী গাভী ও খাসিসহ গোয়ালঘরটি পুড়ে যায়।
বিধবা বৃদ্ধা সামছুন্নাহার বলেন, রাইত মনে অয় সাড়ে চাইরটা বাজে। একটা বিকট শব্দ হুইনা আমার ঘুমডা ভাঙে। দরজা খুইল্যা বাইরে বাইর অইয়া দেহি দাউ দাউ কইরা আগুন জ্বলতাছে। আমি জোরে চিৎকার মারি। পাড়ার মানুষ ছুইডা আসার আগেই আমার সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।
ওই নারী আরও বলেন, আমরার চাইরজনের সংসার। আমার বড় ছেলের মেয়ে আমার নাতনি শান্তা ইসলাম মোহনগ্রঞ্জ মহিলা কলেজে আইএ ও নাতি আকাশ মিয়া ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ক্লাস এইটে পড়তাছে। ভাবছিলাম গরুডার বাছুর অইব। দিন যাইব আর এইডার বংশ বাড়ব। গরুর দুধ বেইচ্ছা বেইচ্ছা দুই নাতির লেহাফড়ার খরচ চালাইমু। ফরে একটা ঘর বানমু। আর ভালা ঘরের জামাই দেইক্যা নাতনিডারে বিয়া দিয়াম। আমার সব স্বপ্ন আউজগা শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। অহন কিবায় কিতা অইব?
আতকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন (২৮) বলেন, ওই পরিবারটি খুবই দরিদ্র। বিধবা বৃদ্ধা ওই নারীর উপর সংসারটি নির্ভরশীল। আগুনে ওই নারীর সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। সরকারি সহায়তা পেলে তাদের খুব উপকার হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু তালেব বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবরটি পাওয়া পর শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমি আতকাপাড়া গ্রামে যাই। সবকিছু জানার পর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ওই দরিদ্র নারীর হাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছি। এছাড়া ওই নারীকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় টিন ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
এসএ/আরআর-০২