বড়লেখায় আরও ৬টি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জুন ২২, ২০২১
০৫:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২২, ২০২১
০৫:৩৩ অপরাহ্ন



বড়লেখায় আরও ৬টি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় একের পর এক ভবন নির্মাণের কাজে ধরা পড়ছে নানা অনিয়ম। এ যেন রীতিমতো অনিয়মের মচ্ছব। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। এতে ভবনগুলোর স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার নির্মাণাধীন আরও ছয়টি বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজে নানা অনিয়ম পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। গত শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের মান পরিদর্শনে গিয়ে এসব অনিয়ম পান। এই ছয় বিদ্যালয় হচ্ছে- কাঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়, হাকালুকি উচ্চবিদ্যালয়, তালিমপুর উচ্চবিদ্যালয়, মাইজগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়, শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টেকাহালী উচ্চবিদ্যালয়। এদিকে উপজেলার রহমানিয়া ও পাল্লাথল চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কাজের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এগুলোর কাজ এখনও অর্ধেকও হয়নি।  

এর আগে গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী উপজেলার নারীশিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বড়লেখা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ছোটলিখা উচ্চবিদ্যালয় ও চান্দ্রগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে গত রবিবার দৈনিক সিলেট মিররে ‘বড়লেখায় চার বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে কাঠালতলী উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে ১ কোটি ১ লাখ টাকা, হাকালুকি উচ্চবিদ্যালয়ের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, তালিমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা, মাইজগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও টেকাহালী উচ্চবিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ৮৮ লাখ ৯২ হাজার ৯২৮ টাকা, রহমানিয়া চা-বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাল্লাথল সরকারি প্রাথমিক ভবন নির্মাণে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৮ ব্যয় হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী নির্মাণাধীন বিদ্যালয়গুলোর কাজের মান পরিদর্শনে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বড়লেখা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ। তারা সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬টি বিদ্যালয় ঘুরে দেখেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তালিমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাদের কিউরিং ঠিকমতো হয়নি। ছাদের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। বাথরুমের ফিটিংস নিম্নমানের। শ্রেণিকক্ষেও ডেস্ক-বেঞ্চে নিম্নমানের কাঠ লাগানো হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের স্মার্ট বোর্ড ব্যবহারের অনুপযোগী। হাকালুকি উচ্চবিদ্যালয়ে বালুমিশ্রিত মাটি দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। ভবনের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। শ্রেণিকক্ষে মোজাইকের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। কাঠলতলী উচ্চবিদ্যালয়ে কাজের সাইটে নিম্নমানের ইট পাওয়া গেছে। পূর্বে নির্মিত ভবনে কিছু স্থানে ফাটল দেখা গেছে। মাইজগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের সাইটে নিম্নমানের ইট পাওয়া যায়। ভবনের কাজের কিউরিং ঠিকমতো হয়নি। টেকাহালি উচ্চবিদ্যালয়ের ভবনে কিউরিং ঠিকমতো হয়নি। বাথরুমের ফিটিংস নিম্নমানের। মোটর ও পানির ট্যাংক বিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়নি। শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এদিকে গুণগত মান যাচাই করতে তালিমপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্লাস্টারের নমুনা ও শ্রীধরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাথরের নমুনা সিলগালা করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন গতকাল সোমবার বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনের ত্রুটিগুলো সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ যথাযথ না হলে বিল দেওয়া হবে না। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের আওতাধীন তিনটি বিদ্যালয়ের কাজের তদারক কর্মকর্তা ফাতেয়া ফজলে রাব্বি বলেন, করোনার কারণে শ্রমিক সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় দুটি প্রতিষ্ঠানের কাজে বিলম্ব হয়েছে। সময় বাড়িয়ে এগুলোতে কাজ করা যাবে। সে সুযোগ আছে। অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ চলমান আছে। পাথরের যে ত্রুটি পাওয়া গেছে, এগুলো আগেই ঠিকাদারকে সরাতে বলা হয়েছিল। নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান যাচাই করেই আমরা কাজ করাচ্ছি। মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। 

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী গতকাল সোমবার বলেন, দুইদিনে নির্মাণাধীন ১২টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে ১০টি বিদ্যালয় ভবনের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও বেশকিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলা হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্লাস্টার ও পাথরের গুণগত মান যাচাই করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো সিলগালা করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে। দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী প্রত্যেক ভবনের যাবতীয় কাজ যথাযথ না হলে ঠিকাদারদের বিল না দিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করা হবে।


এজে/আরআর-০১