সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ
জুন ২৬, ২০২১
০৩:০০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ২৬, ২০২১
০৩:০০ পূর্বাহ্ন
বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট- এ প্রবাদবাক্যের বাস্তবতা মিলেছে সুনামগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোতে। বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কর্মযজ্ঞ বাইরে থেকে দেখে স্বস্তিদায়ক মনে হলেও ভেতরে এর কোনো বালাই নেই। এক সিট ফাঁকা রেখে বসা, মাস্ক পরা বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার না করেই সুনামগঞ্জ-ঢাকা সড়কে বাসগুলো চলছে। এতে বাসগুলো থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়কে প্রতিদিন দুইরকম ভাড়ায় বাস চলাচল করে। একরকমের বাসগুলোর ভাড়া নির্ধারিত। এর মধ্যে রয়েছে শ্যামলী, এনা, হানিফ ও মামুন পরিবহন। এ বাসগুলো ছাড়া অন্য বাসগুলোর ভাড়া যাত্রীরা দর কষাকষি করে কমাতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে লিমন, রুপসী বাংলা, এনপি, আল শামীম, কর্ণফুলী, সাকিন, আরপি, আল মোবারক ও একতা পরিবহন। এ পরিবহনগুলো আপদকালীন সময় ছাড়া সাধারণ সময়ে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় পরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩০০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। তবে এখন নির্দিষ্ট ভাড়া নেই। যার কাছ থেকে যে রকম পারা যায়, তাই ভাড়া রাখছে তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লিমন ও রুপসী বাংলার মতো পরিবহনগুলো যাত্রী তোলার সময় বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললেও ভেতরের চিত্র একদম উল্টো। যাত্রীদের মুখে যেমন নেই মাস্ক, তেমনি একজন যাত্রীর কাছ থেকে দুই সিটের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ পাশাপাশি দুই সিটেই যাত্রী নেওয়া হয়। এছাড়া পথিমধ্যেও বাসে যাত্রী তোলা হয়। এতে সিট না থাকলেও অনেককে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে গন্ত্যবে।
জগন্নাথপুরের একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ায় বাড়ি থেকে তাকেও বিদ্যালয়ে আসতে হয়েছে। এ জন্য তিনি ঢাকা থেকে লিমন পরিবহন নামক বাসে করে সুনামগঞ্জ ফিরেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সিট নিয়েছি। বাসে উঠে দেখি স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। শারীরিক দূরত্ব নেই কারও মাঝে। একজনের কাছ থেকে দুই সিটের ভাড়া নিলেও দুই সিটে দুইজন যাত্রী বসাচ্ছে। পথ থেকেও অনেক যাত্রী নিয়েছে তারা। শেষে কয়েকজন যাত্রী দাঁড়িয়ে এসেছেন সুনামগঞ্জে।
সুনামগঞ্জের লিমন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের ম্যানেজার রোবায়েল এমন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শুধু আমরা নই, সব টিকিট কাউন্টারেই যাত্রীদের কাছ থেকে এরকম ভাড়া নেওয়া হয়। আর দুই সিটেই যাত্রী বসানো হয়।
ভাড়া কি আগের মতোই নেওয়া হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। তবে এখন যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, পরিবহনসহ সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। মহামারি করোনা থেকে বাঁচতে জরুরি ৪টি বিষয় আমাদেরকে মানতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাধারণ সাবান অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখা এবং সবাই ভ্যাকসিন নেওয়া। বড় জমায়েতসহ বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান সবকিছু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সবাই কাজ করছেন। তবে দিন শেষে বলা যায়, করোনা মহমারি থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
এএম/আরআর-১০