শামীম আহমেদ, ধর্মপাশা
জুন ২৮, ২০২১
০৮:৩১ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৮, ২০২১
০৮:৩১ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত উপজেলা ধর্মপাশা। এ উপজেলায় রয়েছে ১২টি হাট-বাজার। এগুলোর মধ্যে ১৪২৮ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর মেয়াদে ৮টি হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর বাকি ৪টি হাট-বাজার ইজারাবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ইজারা দেওয়া ৮টি বাজারের মধ্যে একটিতেও টোল (খাজনা) আদায়ের কোনো তালিকা টানানো নেই। সরকারি নির্দেশনা না মেনে হাট-বাজারগুলোতে ইজারাদারের নিয়োজিত লোকজন তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো টোল আদায় করে আসছেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন বাজারে বিভিন্ন ধরনের মালামাল কিনতে আসা ক্রেতারা। অতিরিক্ত টোল আদায় করার ফলে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজার ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকায়, গোলকপুর বাজার ৭৫ হাজার টাকায়, মহেষখলা বাজার ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ভোলাগঞ্জ বাজার ১ লাখ ৬ হাজার টাকায়, মধ্যনগর বাজার ৭১ লাখ টাকায়, বংশীকুণ্ডা বাজার ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকায়, গাছতলা বাজার ১৫ হাজার টাকায় ও সানবাড়ী বাজার ১ লাখ ২৬ হাজার টাকায় ইজাদারদের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্মপাশা বাজারটি মামলাজনিত কারণে এবং গাছতলা, রাজাপুর ও জয়শ্রী বাজারটির ইজারা ডাকে কেউ অংশ না নেওয়ায় এসব বাজার ইজারাবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ইজারাকৃত হাট-বাজারে আসা ক্রেতাদের কাছ থেকে ইজারাদাররা বাজারে ক্রয়কৃত মালামালের ওপর শতকরা সোয়া ৬ টাকা হারে টোল আদায় করার কথা রয়েছে। কিন্ত ইজারা হওয়া উপজেলার সবকটি হাট-বাজারে ইজারাদারের নিয়োজিত লোকজন শতকরা ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা করে টোল আদায় করে আসছেন। বাজারগুলোর জনবহুল স্থানে প্রকাশ্যে টোল আদায়ের তালিকা ইজারাদাররা টানানোর কথা থাকলেও একটি বাজারেও টোল আদায়ের তালিকা টানানো হয়নি।
সরেজমিনে গত বুধ, বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বাদশাগঞ্জ বাজার, গাছতলা বাজার, সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলকপুর বাজার, বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের মহেষখলা বাজার, ভোলাগঞ্জ বাজার, মধ্যনগর ইউনিয়নের মধ্যনগর বাজার, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের বংশীকুণ্ডা বাজার ও জয়শ্রী ইউনিয়নের সানবাড়ী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকারিভাবে ইজারা হওয়া একটি বাজারেও টোল আদায়ের কোনো তালিকা টানানো হয়নি। ইজারাদারের নিয়োজিত লোকজন তাদের ইচ্ছামতো ক্রেতাদের কাছ থেকে টোল আদায় করছেন।
সেলবরষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেনুয়ার হোসেন খান বলেন, উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারেও অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টিতে উপজেলা প্রশাসন সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
তবে উপজেলার মধ্যনগর বাজারের ইজারাদার ইসতিয়াক হোসেন চৌধুরী স্বপন বলেন, মধ্যনগর বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগটি ভিত্তিহীন। আগে যেভাবে এই বাজারের ইজারাদার টোল আদায় করেছেন, আমাদের লোকজনও সেভাবেই আদায় করছে। এই বাজারে সরকার নির্ধারিত হারেই টোল আদায় করা হচ্ছে। যদি প্রশাসন থেকে টোল আদায়ের তালিকা টানানোর নির্দেশনা পাই, তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টোল আদায়ের তালিকা টানিয়ে দেওয়া হবে।
মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, এই বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও মালামাল কিনতে আসা মানুষজনের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজারটিতে দিন দিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি কমে আসছে। দ্রুত টোল আদায়ের তালিকা টানিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনও স্যারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, বাজারগুলো থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখব। এছাড়া খুব শিগগিরই ইজারাকৃত হাট-বাজারগুলোর ইজরাদারদের নিয়ে সভা করে জনবহুল স্থানে টোল আদায়ের তালিকা টানিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএ/আরআর-০১