বড়লেখায় ঘরে বসেই ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করবেন বিদেশগামীরা

বড়লেখা প্রতিনিধি


জুলাই ০৪, ২০২১
০৮:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৪, ২০২১
০৮:৪৫ অপরাহ্ন



বড়লেখায় ঘরে বসেই ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করবেন বিদেশগামীরা

দেশে প্রথমবারের মতো মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিবন্ধন সেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে। করোনার টিকা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদেশগামীদের ভোগান্তি দূর করতে বড়লেখা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা সদর ব্যতিত দেশের মধ্যে বড়লেখা একমাত্র উপজেলা যেখানে প্রবাসীরা প্রায় ঘরে বসেই টিকার নিবন্ধন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত ফি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

রবিবার (৪ জুলাই) দুপুরে ভার্চুয়ালি এই নিবন্ধন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। প্রথম দিন উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নে ৪ জন প্রবাসীর টিকার নিবন্ধন করা হয়েছে।

নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।

এ সময় বক্তব্য দেন, বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক, উপকারভোগীদের মধ্যে সৌদি প্রবাসী আব্দুল হাফিজ, দুবাই প্রবাসী আবুল হোসেন, উদ্যোক্তা রাসেল সাইফ প্রমুখ।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখা। এখান থেকে জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বড়লেখা প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছেন বড়লেখার অসংখ্য মানুষ। করোনা পরিস্থিতিতে ছুটিতে দেশে আসা ও প্রবাসে গমনেচ্ছুক কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। এ অবস্থায় সারা দেশের প্রবাসীদের জেলা সদর ও অথবা নির্ধারিত স্থানে গিয়ে নিবন্ধন করতে সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। লকডাউন পরিস্থিতিতে বড়লেখা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের জেলা সদরে গিয়ে প্রবাসীদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করা অত্যন্ত কষ্টকর। এ কষ্ট লাগবের জন্য উদ্যোগ নেন বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। এরপর গতকাল শনিবার (৩ জুলাই) মৌলভীবাজার জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সঙ্গে ভার্চুয়ালি ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের (ইউডিসি’র) কয়েকজন উদ্যোক্তাকে ১ ঘণ্টার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি একটি মাইক্রোবাস, ৩ জন ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার, প্রয়োজনীয় ল্যাপটপসহ একটি ভ্রাম্যমাণ দল গঠন করে দেন। যারা বিভিন্ন ইউনিয়ন কার্যালয়ে বসে ও প্রয়োজনে প্রবাসীদের বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন নিবন্ধন করে দেবেন। নিবন্ধন করতে প্রবাসীদের শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত ফি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

এ ব্যাপারে আলাপকালে নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের গল্লাসাংঙ্গন গ্রামের সৌদি প্রবাসী আব্দুল হাফিজ বলেন, লকডাউনে জেলায় গিয়ে ভ্যাকসিন নিবন্ধন করা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম। আমার বাড়ি থেকে মৌলভীবাজার সদর প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। যাওয়া-আসায় মোট ১৮০ কিলোমিটার। এই সেবা চালু করে ইউএনও স্যার আমদের কষ্ট দূর করে দিয়েছেন। আজ নিজের ইউনিয়নে বসে দ্রুত নিবন্ধন করতে পেরেছি। নিবন্ধন করে কিছুটা চিন্তামুক্ত হলাম।

বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বড়লেখা শহর থেকে জেলার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। লকডাউনে টিকার নিবন্ধনের জন্য জেলায় যাওয়া প্রবাসীদের জন্য অনেক কষ্টকর এবং ব্যয়বহুল। তাই তাদের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম আরও নিরাপদ ও সহজতর করার লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে আমাদের এই উদ্যোগ। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করেছি দক্ষ উদ্যোক্তাদের নিয়ে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সকল ইউনিয়ন এবং বড়লেখা পৌরসভার উদ্যোক্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা নিজ ইউনিয়নে বসে প্রবাসীদের নিবন্ধন করে দেবেন। প্রয়োজনে প্রবাসীদের বাড়িতে গিয়ে নিবন্ধন করে দেবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি নিজেই মনিটরিং করছি।


এজে/আরআর-০৮