বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
জুলাই ০৬, ২০২১
১০:৪০ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৬, ২০২১
১১:৪৯ অপরাহ্ন
‘সাবধান। ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু, পাঁচ টনের অধিক যানবাহন চলাচল করা নিষেধ।’ সাচনা বাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের যে কয়টি বেইলি সেতু আছে, সবক’টির প্রবেশমুখে এমন সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সাঁটানো রয়েছে। কিন্তু সুনামগঞ্জের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর আদেশ সম্বলিত সাইনবোর্ডের তোয়াক্কা না করে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সেতু পার হচ্ছে ভারী যানবাহন। কোনো নজরদারি না থাকায় রাতের আঁধারে মালবাহী বিশাল ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যানগাড়ি দেদারছে আসা-যাওয়া করছে। চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সাচনা বাজারের একশ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ট্রাকভর্তি মালামাল বাজারে নিয়ে আসছে।
সক্ষমতার চেয়ে তিন-চার গুণেরও বেশি মালামাল নিয়ে যাতায়াতকারী এসব যানের চাপে যে কোনো সময় সেতু ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে যান ও মালামালের ক্ষতিসহ মূল্যবান জীবন বিলীনের পাশাপাশি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করার শঙ্কা রয়েছে। গত প্রায় তিন বছর আগে ঢেউটিন ভর্তি একটি ট্রাকের অসহনীয় ভারে সড়কের শালমারা অংশের বেইলি সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পরে জোড়াতালির মেরামতে যাতায়াত স্বাভাবিক হলেও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ফের অধিক পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। স্বাভাবিক চলাচলের ঝুঁকি এড়াতে লোড নিতে অক্ষম এমন যানবাহনের যাতায়াত বন্ধ করতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন সচেতন যাত্রী ও চালকসহ সবাই।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ-সাচনা বাজার সড়ক একটি অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। জেলা শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী এ সড়ক দিয়ে বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুরসহ ৫-৬টি উপজেলার প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ দৈনন্দিন যাতায়াত করে থাকেন। এ সড়কে কুকড়াপশী, শালমারা ও নিয়ামতপুর-ইচ্ছারচড় অংশের ৩টি বেইলি সেতুসহ দেবে যাওয়া ঢালাইকৃত একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তখন সাচনা বাজারের ব্যবসায়ী রতন পালের মালিকানাধীন অর্নব ট্রেডার্সের টিন বহনকারী ট্রাক শালমারা বেইলি সেতু পাড়ি দিতে গিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়। পরে কয়েকদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় সড়কটি চালু হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, টিন, রড, সিমেন্ট, গ্যাস সিলিন্ডার, সার, বীজ, ফলমূল, মুদি মালমালসহ সব ধরনের ভারী মালামাল নিয়ে বিশালাকার ট্রাক প্রতিনিয়ত সুনামগঞ্জ সড়কের বেইলি সেতু হয়ে সাচনা বাজারে প্রবেশ করছে। রাত একটু গভীর হলেই মালবাহী ভারী যান বাজারের রোড দখল করে বসে। পরে মালামাল নামিয়ে রাতেই ট্রাক নিয়ে সটকে পড়েন চালকরা। এছাড়া মাঝে-মধ্যে মালবাহী ট্রাক ও ভ্যান দিনে-দুপুরে বাজারে ঢুকে চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষের আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন চরম ঝুঁকি নিয়েই সেতু পার হচ্ছে অধিক ওজনের ভারী মালামাল বহনকারী ট্রাক। এই ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কারও কোনো নজরদারি নেই।
এ ব্যাপারে সাচনা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে যে কয়টা বেইলি সেতু আছে সেগুলো অধিক পণ্যবাহী যান চলাচলের সক্ষমতা রাখে না। তারপরও ট্রাক ভর্তি করে দিনে-রাতে যেভাবে মালামাল আসছে, তাতে সেতু ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা এসব মালামাল আনেন, তারা ইচ্ছা করলে তা নৌকায় করেও আনতে পারেন। কিন্তু তারা সময় ও খরচ বেশি লাগবে বিধায় ট্রাকেই মালামাল নিয়ে আসেন। এটি আসলে ঠিক নয়। সেতু ভেঙে গেলে সবাইকেই সমস্যায় পড়তে হবে। এ বিষয়টিতে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
সাচনা বাজারের মোটরসাইকেলচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে যে স্টিলের সেতুগুলো আছে তার একটা ভেঙে গেলেই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সুনামগঞ্জে যেতে পারবে না। তখন আমাদের রোজগারও কমে যাবে। বেইলি সেতু দিয়ে যাতে বড় কোনো ট্রাক না আসতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
নিয়মিত জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জে যাতায়াত করা সাচনা বাজারের পার্শ্ববর্তী পলক গ্রামের বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, প্রায় প্রতিরাতেই মালামাল বোঝাই বড় ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক সাচনা বাজারে প্রবেশ করছে। এই ট্রাকগুলো সুনামগঞ্জ-সাচনা সড়কের ৩-৪টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে বাজারে ঢোকে। তাই যে কোনো সময় সেতু ভেঙে যাত্রীসাধারণকে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হবে। দুই-আড়াই বছর আগেও শালমারার সেতু ভেঙে কয়েকদিন যাতায়াত বন্ধ ছিল। এখন বাধাহীনভাবে বড় বড় ট্রাক যেমন আসা-যাওয়া করছে, তাতে সেতু ভেঙে ভোগান্তি বাড়লে এর দায় কে নেবে?
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ নির্দেশনা মানে না। আমাদের পক্ষেও ২৪ ঘণ্টা দেখভাল করা সম্ভব নয়। যখন সেতু ভাঙবে, তখন সকলেই বিপদে পড়বে। এসব বেইলি সেতুর নকশা তৈরি করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নকশা তৈরি হলে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে। এরপর প্রকল্প অনুমোদন হলে সেতুর কাজের দরপত্র হবে।
বিআর/আরআর-০১