ত্রাণ ও অর্থ বিতরণে উপেক্ষা, ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধি ও নেতারা

বড়লেখা প্রতিনিধি


জুলাই ১২, ২০২১
১০:০৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১২, ২০২১
১০:০৭ অপরাহ্ন



ত্রাণ ও অর্থ বিতরণে উপেক্ষা, ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধি ও নেতারা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় করোনাকালীন সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের উপক্ষো করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জেলার ৭টি উপজেলায় ১৩ হাজার দুস্থ পরিবারে করোনাকালীন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বিভিন্ন উপজেলায় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করলেও বড়লেখায় এর ব্যতিক্রম ঘটায় জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গত ২২ মে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ১৭ মেট্রিক টন জিআর চাল ও প্রায় ৫০ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ বরাদ্দ পাওয়া যায়। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে করোনাকালীন সরকারি ত্রাণের বরাদ্দপ্রাপ্তি, বিভাজন ও বিতরণের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন কোনো কিছুই অবহিত করেনি। উপজেলা পরিষদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গত ২৪ জুন উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ৩৫ লাখ টাকার বরাদ্দের অংশের জিআর চাল ও জিআর ক্যাশ টাকা বিতরণ করেন। গত বৃহস্পতিবার পিসি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একই বরাদ্দ থেকে ১৫০ জনকে জিআর চাল ও জিআর ক্যাশ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমে উপজেলা পরিষদ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশ কাটানোর ঘটনায় বিভিন্ন মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ অভিযোগ করে জানান, তিনি উপজেলার বিভিন্ন কমিটির হয় প্রথম, না হয় দ্বিতীয় উপদেষ্টা। কিন্তু করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য গত জুন মাসে সরকারি বরাদ্দের চিঠিপত্রের কোনো কিছুই উপজেলা প্রশাসন তাকে অবহিত করেনি। রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরকারি ত্রাণের তথ্য, বিভাজন, তালিকা প্রণয়ন, বন্টনসহ কোনো কার্যক্রমে তাকে বা ভাইস চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত করেননি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি ও তাকে সম্পৃক্ত না করায় সাধারণ জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনকে জানিয়েছেন।   

বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, অতীতে ত্রাণ বিতরণের সকল কার্যক্রমে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ত করা হতো। বর্তমান করোনাকালীন সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমে অতি উৎসাহী দুই-একজন সরকারি কর্মকর্তারা তাদেরকে পাশ কাটিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন, যা রহস্যজনক। কার ইন্ধনে তারা এসব করছেন তা খুঁজে বের করতে হবে।  

বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. প্রণয় কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম সুন্দর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ প্রমুখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে সরকারের সব কার্যক্রমে আমাদের সম্পৃক্ত রাখা হতো। কিন্তু চলমান করোনাকালে ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচিতে ইউএনও ও পিআইও আমাদেরকে সম্পৃক্ত করেননি, দাওয়াতও দেননি। সরকারের দেওয়া এসব ত্রাণসমাগ্রী বিতরণে উপস্থিত হলে নেতাকর্মীরাও খুশি হতো। সরকারের ভালো কাজ প্রচার পেত।

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, ত্রাণ সংক্রান্ত বরাদ্দ উপজেলায় এলে তা উপ-বরাদ্দ হিসেবে ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় দেওয়া হয়। ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার। আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে বার বার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে ত্রাণ বিতরণের সময় সকলকে অবগত করা হয়। তারপরও যদি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা ত্রাণ বিতরণকালে সকলকে অবগত না করে তাহলে তা দুঃখজনক।


এজে/আরআর-০১