রক্ত দিয়ে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়ালেন ধর্মপাশার ইউএনও

ধর্মপাশা প্রতিনিধি


জুলাই ১৭, ২০২১
১১:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৭, ২০২১
১১:৫০ অপরাহ্ন



রক্ত দিয়ে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়ালেন ধর্মপাশার ইউএনও

 ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর হোসেন (৭১)। যুদ্ধকালীন সময়ের টগবগে মো. নূর হোসেন এখন আর আগের মতো নেই। শরীরে কঠিন রোগ বাসা বেঁধেছে। দুই বছর ধরে তিনি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। স্বাস্থ্যহানি ঘটার পাশাপাশি শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে গেছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে ৪ মাস পর পর দুই ব্যাগ করে রক্ত দিতে হয়।

গতকাল শুক্রবার (১৬ জুলাই) বেলা ২টার দিকে তাঁর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন নিজের ফেসবুক আইডি থেকে বাবার জন্য রক্ত চেয়ে একটি পোস্ট দেন। আর সেটি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসানের। আজ শনিবার (১৭ জুলাই) বেলা ২টার দিকে অসুস্থ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন ইউএনও।

ক্যানসারে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর হোসেনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের উত্তরবীর গ্রামে। তিনি উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমার আব্বা দুই বছর ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। শরীর দুর্বল ও রক্তশূন্য হয়ে পড়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ৪ মাস পর পর আব্বার শরীরে দুই ব্যাগ করে রক্ত দিতে হয়। শুক্রবার বেলা ২টার দিকে 'আমার আব্বার জন্য রক্তের প্রয়োজন' এমনটি লিখে আমার ফেসবুক ওয়াল থেকে একটি পোস্ট করি। আর এই পোস্ট দেখে ধর্মপাশা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান স্যার আব্বাকে রক্ত দেবেন বলে আমাকে জানান। কথামতো আজ শনিবার বেলা পৌনে ২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে এসে ইউএনও স্যার এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন। পরে হাসপাতালের মুক্তিযোদ্ধা কেবিনে থাকা আব্বার শরীরে এই রক্ত প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এক ব্যাগ রক্ত স্থানীয় একজন শিক্ষার্থী দেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমরা স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন বলেন, আমি ভীষণ অসুস্থ। একজন ইউএনও হয়ে আমাকে রক্তদান করায় আমি ও আমার পরিবারকে তিনি চিরঋণী করে রেখেছেন। মানুষ মানুষের জন্য সেই কথাটি আবার নতুন করে প্রমাণিত হলো। এমন মানসিকতার মানুষজন পৃথিবীতে হাজার বছর বেঁচে থাকুক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, মানবিকতার তাগিদ থেকেই ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আমি রক্ত দিয়েছি। তিন মাস পর পর প্রতিটি সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারে। তাই রক্ত দিলে যদি মানুষের উপকার হয়, জীবন বাঁচে, তাহলে মানুষ হয়ে মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়ালে রক্তের অভাবে কাউকে মরতে হবে না। আমার জীবনে এ নিয়ে আমি ৫ বার রক্ত দিয়েছি।


এসএ/আরআর-০৯