ক্রিকেটারদের ঈদ জামাতে ইমাম ছিলেন রিয়াদ

খেলা ডেস্ক


জুলাই ২১, ২০২১
০৭:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২১, ২০২১
০৭:১৮ অপরাহ্ন



ক্রিকেটারদের ঈদ জামাতে ইমাম ছিলেন রিয়াদ
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ

হারারেতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ঈদের নামাজে ইমামতি করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।


দেশের বাইরে পরিবার–পরিজনহীন ঈদ ক্রিকেটারদের জন্য এমনিতে নিরানন্দের। তার ওপর গতকাল ছিল সিরিজের শেষ ওয়ানডে এবং আগামীকাল প্রথম টি–টোয়েন্টি। দুই ম্যাচের মাঝে আজ ঈদুল আজহার দিনটা ফাঁকা পেলেও অবসর ছিল না। সকাল নয়টার আগেই ক্রেস্টা লজ হোটেলের সবুজ চত্বরে এসে জমায়েত হলেন ক্রিকেটাররা। অনেকের হাতেই জায়নামাজ। প্রায় সবার গায়েই ঈদের দিনের পোশাক পায়জামা–পাঞ্জাবি–টুপি। ঠিক সময়ে জনা বিশেক মানুষের ঈদের জামাত হয়ে গেল বাংলাদেশ দলের হোটেলে। ক্রিকেটারদের ঈদের নামাজে ইমামতি করেন টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।


দুপুর সাড়ে ১২টায় হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অনুশীলন এবং তাতে মোটামুটি দলের অনেকেই যোগ দিলেন। টি–টোয়েন্টি সিরিজে খেলবেন না বলে তামিম ইকবাল এবং মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটেই দেশে ফেরার কথা।

ঈদের নামাজের কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিকেটারদের ঈদ উদ্‌যাপনের ছবি চলে এসেছে। টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ইমাম। সাদা চাদর আর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন ক্রিকেটাররা। নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি আর কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষেই অবশ্য অনুশীলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে রুমে ফিরে যান সবাই। ঈদ উপলক্ষে রাতে বিশেষ খাবার–দাবারের আয়োজন হওয়ার কথা টিম হোটেলে।

তা হারারেতে কেমন কাটছে ক্রিকেটারদের ঈদ? সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে পেসার তাসকিন আহমেদ বলছিলেন, ‘পরিবারকে খুব মিস করছি। কিন্তু কিছু করার নেই। দেশের হয়ে খেলতে এসেছি, এটাও একটা আনন্দের বিষয়। আর এখানে আমরাও একটা পরিবারের মতো। হয়তো মা–বাবা, আমার আড়াই বছরের ছেলে তাসফিক; ওকেও মিস করছি অনেক। তারপরও ভালো লাগছে যে আল্লাহর রহমতে আমরা এখানে ঈদের নামাজ পড়তে পারলাম।’

আগের দিন দারুণ এক ইনিংস খেলা নুরুল হাসানও সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে বলেছেন, ‘সবাই সুস্থভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন, এটাই আশা।’

সিরিজ উপলক্ষে হারারেতে আসা আরেকটা দল আছে ব্রন্টে গার্ডেন হোটেলে। দল বলতে বাংলাদেশ থেকে আসা কয়েকজন সাংবাদিক এবং টেলিভিশন সম্প্রচারের কাজে নিয়োজিত টোটাল স্পোর্টসের লোকজন। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় মনোরম এই হোটেলের সুইমিংপুলের পারে ঈদের নামাজ পড়েছেন বাংলাদেশের দুই ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান ও শামীম আশরাফ চৌধুরী, পাকিস্তানের ধারাভাষ্যকার সিকান্দার বখত এবং সিরিজ কাভার করতে আসা বাংলাদেশের চার সাংবাদিক।

ব্রন্টে গার্ডেন হোটেলে ঈদের নামাজ পড়িয়েছেন আতহার আলী খান। এ নিয়ে দুই দিন ধরেই তাঁর প্রস্তুতি, যেন নির্ভুলভাবে নামাজ পড়ানো যায়।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ধারাভাষ্যকার হিসেবেই পরিচয় বাংলাদেশ দলের সাবেক এই ক্রিকেটারের। যেখানেই বাংলাদেশের ক্রিকেট, সেখানেই তিনি। তবে ১৯৮৬ সালের আইসিসি ট্রফির পর এবারই প্রথম ঈদে পরিবারের সঙ্গে নেই আতহার আলী। মাঝে দেশের বাইরে আরও দু–একবার ঈদ করলেও স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন।

১৯৮৬ সালের আইসিসি ট্রফির কথা মনে করে আতহার বলছিলেন, ‘সম্ভবত কোনো একটা ম্যাচের আগের দিন ঈদ ছিল। বার্মিংহামে আমরা অনুশীলন করতে গিয়ে মাঠেই ঈদের নামাজ পড়েছিলাম।’

খেলার সময়ের ঈদ নিয়ে মজার স্মৃতি আছে আরেক ধারাভাষ্যকার শামীম আশরাফ চৌধুরীরও, ‘২০০৩ বিশ্বকাপে ডারবানে কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। আমি ধারাভাষ্যে বলেছিলাম, বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই কানাডাকে হারিয়ে দেশের মানুষকে ঈদ উপহার দেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ম্যাচটা ৬০ রানে হেরে যাই।’

ব্রন্টে গার্ডেন হোটেল ঈদ উদ্‌যাপন করা মানুষের সংখ্যা টিম হোটেল ক্রেস্টা লজের চেয়ে কম হলেও ঈদের আমেজটা যেন এখানেই বেশি! ঈদ উপলক্ষে আজ হোটেলের রান্নাঘর দখলে নিয়ে নিয়েছেন টোটাল স্পোর্টসের হেড অব প্রোডাকশন তানভীর আহমেদ। হোটেলে থাকা বাংলাদেশি অতিথিদের জন্য দুপুরে নিজ হাতে রান্না করছেন ঈদের বিশেষ খাবার।

পরিবার–পরিজনহীন ঈদ ক্রিকেটের সঙ্গে থাকাদের জন্য নতুন নয় অবশ্য। আতহারের কথা তো শুনলেনই, ঈদে দেশের বাইরে থাকার ঘটনা এরপরও অনেকবারই ঘটেছে ক্রিকেটারদের জীবনে। এবারের আগে যেমন বাংলাদেশ দল সর্বশেষ দেশের বাইরে ঈদ করেছে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সময়। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সেবার রোজার ঈদটা তাদের কেটেছিল লন্ডনে।

এএন/০৫