বড়লেখা শহর যেন ময়লার ভাগাড়, বেড়েছে জনদুর্ভোগ

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জুলাই ২৬, ২০২১
০৬:৩১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৬, ২০২১
০৬:৩২ অপরাহ্ন



বড়লেখা শহর যেন ময়লার ভাগাড়, বেড়েছে জনদুর্ভোগ

সড়কের পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। তা পঁচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এসব ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে গড়িয়ে সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে ও কৃষিজমিতে গিয়ে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ময়লার দুর্গন্ধে আশপাশের এলাকাও হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।  

এ চিত্র মৌলভীবাজারের বড়লেখার চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের (পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের) আইলাপুর এলাকার। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে বড়লেখা পৌর কর্তৃপক্ষ।  

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বিষয়টি তারা একাধিকবার পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার মেলেনি। এতে ময়লার দুর্গন্ধে স্থানীয়দের পাশাপাশি সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজনও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তবে শুধু এই সড়কই নয়, আইলাপুর ছাড়াও শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১০-১২টি স্থানে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। 

বড়লেখা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বড়লেখা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান গড়ে ওঠেনি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়লা ফেলার জায়গার জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। এছাড়া ময়লা ফেলার আর কোনো বিকল্প জয়গা নেই।

সরেজমিনে (আইলাপুর ছাড়াও) বড়লেখা পৌরসভার কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাটবন্দ গ্রামের মিনা বেগমের বাসা সংলগ্ন এলাকা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ান শাহ্ মার্কেটের বারান্দা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গণি ভবন সংলগ্ন এলাকা, পৌর শহরের দক্ষিণবাজার ব্রিজের গোড়া, দক্ষিণবাজারের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড এলাকা, পাখিয়ালা চৌমুহনী থেকে হাসপাতাল সড়কের ৩টি স্থান ও পাখিয়ালা চৌমুহনী থেকে ডিমাই সড়কের চৌমুহনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব স্থানে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য, পলিথিন, পাস্টিকের বোতল, উচ্ছিষ্ট খাবার, কার্টন ইত্যাদি ফেলা রাখা হয়েছে। ময়লা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে। কাপড়ে নাক ঢেকে এসব স্থান অতিক্রম করছেন মানুষজন।   

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আইলাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সত্তার বলেন, আইলাপুর এলাকা দিয়ে যাওয়া চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়কে প্রতিদিন হাজারও যানবাহন চলাচল করে। এই সড়ক দিয়ে বড়লেখার ৪টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পৌরশহরে যাতায়াত করেন। অথচ দুই বছর থেকে এখানে (আইলাপুর এলাকায়) ময়লা ফেলা হচ্ছে। আমরা মেয়রের কাছে অনেকবার অভিযোগ করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব দেন না। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে বাড়িতে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। 

একই ওয়ার্ডের গাজিটেকা এলাকার বাসিন্দা দিপন দাস বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আশপাশের বাড়ির লোকজনও ময়লার দুর্গন্ধে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ময়লা-আবর্জনাগুলো বৃষ্টির পানিতে গড়িয়ে খাল ও কৃষিজমিতে পড়ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আমরা পৌর মেয়রকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। 

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়ন ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমার বাসা ঘেঁষেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছি। কোনো কাজ হয়নি। এই দুর্ভোগ থেকে আমরা কবে মুক্তি পাব জানি না। আমরা চাই দ্রুত এগুলো সরিয়ে নেওয়া হোক।

পৌর শহরের দক্ষিণবাজার এলাকার মুহিবুল ইসলাম বলেন, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। যার কারণে মানুষজন বাসার সামনের খালি জায়গায় ময়লা ফেলছেন। ময়লা যাতে না ফেলা হয় সেজন্য জায়গার মালিক নেট দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। তারপরও লোকজন ময়লা ফেলছেন। কিন্তু এগুলো পরিষ্কার না হওয়ায় পঁচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ীভাবে একটি জায়গা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে এই জায়গা আমাদের অনুকূলে যে কোনো শর্তে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। এছাড়া অন্যভাবে জায়গা ক্রয় করারও প্রস্তুতি আমাদের আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবেই ময়লা ফেলা লাগবে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে ময়লা ফেলতে আমরা আগ্রহী নই। আমরা শহরটাকে পরিষ্কার রাখতে পারছি না। বেশি ময়লা তো এক এলাকায় ফেলা যায় না। যেগুলো না নিলে নয়, সেগুলো নেওয়া হচ্ছে। গ্রামের ময়লাগুলো নিয়ে কোথাও ফেলা যাচ্ছে না। এজন্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কোনো ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে না।


এজে/আরআর-০৪