ওসমানীনগরে মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


জুলাই ২৬, ২০২১
০৯:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৬, ২০২১
০৯:১০ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরে মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা
তিনদিনেও গ্রেপ্তার নেই

সিলেটের ওসমানীনগরে মসজিদে দুইপক্ষের সংঘর্ষের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুইপক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে থানায়। দুটি মামলায় আসামি দেখানো হয়ে মোট ৪৫ জনকে। এর মধ্যে আছেন অজ্ঞাত ১৫ জন। মসজিদের মধ্যে এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মসজিদে কমে গেছে মুসল্লির সংখ্যা।

গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের বাইতুল মামুর জামে মসজিদে একটি কাঁঠালের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নিলামকে কেন্দ্র করে উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা সুয়েব ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নিলে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মসজিদ অঙ্গন ও আশপাশের এলাকা। এ ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৭ জন আহত হন। খবর পেয়ে উমরপুরের ৮ জন ইউপি সদস্য ও স্থানীয় প্রবীণরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সালিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর আহত সবাইকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এদিকে গত শনিবার (২৪ জুলাই) গভীর রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা রেকর্ড করা হয়। মাওলানা সুয়েবের পক্ষ থেকে মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ। এ মামলায় ১৩ জনের নামোল্লেখ করে আরও ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে কাওছার আহমদের পক্ষে মামলায় বাদী হয়েছেন সংঘর্ষে আহত আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে সাইফুল আলম। তার মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অজ্ঞাত ৮ জন। মামলার পর থেকে উভয়পক্ষের লোকজন আত্মগোপনে রয়েছেন।

রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেটের এডিশনাল এসপি (ওসমানীনগর সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলাম। এ সময় ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক, দুটি মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) মাছুদুল আমিন ও এসআই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদার তার সঙ্গে ছিলেন।    

সরেজমিনে কামালপুর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে মাওলানা সুয়েবের সাহায্য নিয়ে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ প্রতিবেশী আবু বকর সিদ্দিকী গং ও তার বাড়ির উঠানের মধ্যখানে ১০ ফুট উচ্চতার একটি আড়াআড়ি দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে আবু বকর সিদ্দিকী গংদের চলাচলের রাস্তা ও পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের সালিশানরা দেয়াল নির্মাণ না করার অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। গত ১৮ জুন বাইতুল মামুর জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি মাওলানা সুয়েব আহমদের মরহুম পিতার নামে শিরনী বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা হয়। সে সময় শিরনী গ্রহণে অপারগতা জানান আবু বকর গংরা। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা সুয়েব গংরা আবু বকর সিদ্দিকী, কাওছার আহমদ, শাহীন মিয়া, মুজিব মিয়া ও প্রবাসী সামসুল ইসলামের পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করেন। এতে গ্রামের লোকজন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা ও উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা সুয়েব এবং অন্যপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদ। গত ১৬ জুলাই মসজিদের একটি কুমড়ার নিলাম নিয়ে উক্ত দুটি পক্ষ বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হলে অন্যদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। সর্বশেষ শুক্রবারের সংঘর্ষের পর আতঙ্কে মসজিদে কমে গেছে মুসল্লির সংখ্যা। 

একপক্ষের মামলার বাদী সাইফুল আলম শ্যামল বলেন, আমার বাবা, চাচারা জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। নামাজ শেষে বৃষ্টি থাকায় সবাই মসজিদে আটকা পড়েন। এরপর কাঁঠালের নিলামকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে বিবাদীরা মসজিদের উঠানে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিবাদীদের এই হামলা আমরা পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছি। কারণ হঠাৎ করে এতো লাঠি, রড, পাইপ আসার কথা না। তাদের বাড়ি মসজিদের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় তারা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল। আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে আমাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবেও বিচার চাইব।

অপর মামলার বিবাদী উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ বলেন, বিবাদীদের হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। আমিসহ সবাই এখনও চিকিৎসাধীন।

ধারণকৃত ভিডিওচিত্রে তাকে (ইকবাল আহমদকে) লাঠি হাতে দেখার বিষয়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় আমি উভয়পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম। এ সময় একজন আমার মাথায় আঘাত করলে আমি তার হাত থেকে লাঠি কেড়ে নেই। ভিডিওচিত্রে সেই লাঠিসহ আমায় দেখা গেছে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য (১ নম্বর ওয়ার্ড) জুয়েল আহমদ বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমিসহ ৮ ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করি। উভয়পক্ষকে সালিশে বসার অনুরোধ করলে মাওলানা সুয়েব গংরা আমাদের কাছ থেকে একদিন সময় নেন। কিন্তু পরবর্তীতে কাউকে কিছু না জানিয়ে এ বিষয়ে তার পক্ষ থেকে থানায় মামলা দিলে অপরপক্ষও পাল্টা মামলা দিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকার জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করলেও বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় উভয় অভিযোগ মামলা আকারে গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখিত আসামিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখে উভয় মামলার চার্জশিট দ্রুত প্রদান করা হবে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। তারা পলাতক থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।


ইউডি/আরআর-১৪