নমুনা পরীক্ষায় অনীহা, ভরসা পল্লী চিকিৎসক

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জুলাই ৩১, ২০২১
১০:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ৩১, ২০২১
১০:৩৬ অপরাহ্ন



নমুনা পরীক্ষায় অনীহা, ভরসা পল্লী চিকিৎসক
জামালগঞ্জে ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের প্রায় বাড়িতেই করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এতে টুকটাক ওষুধ খেয়ে কাজ না হলে বড়জোর পল্লী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ মহামারীকালীন দুঃসময়ে অধিকাংশ পরিবারের কোনো না কোনো মানুষ করোনাভাইরাসের সমূহ লক্ষণ বয়ে বেড়ালেও করোনা শনাক্তের নমুনা পরীক্ষা কিংবা চিকিৎসা নিতে কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছেন না। জ্বর-সর্দিসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে হাট-বাজারে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভাইরাসবাহী সম্ভাব্য রোগীরা। তাদের কারও মাঝে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা চোখে পড়ছে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি বা হতাশা নেই বললেই চলে।

জানা যায়, জ্বর-সর্দিতে ভোগা প্রায় ৩০ ভাগ মানুষের দেহে যে করোনার উপস্থিতি রয়েছে তা অনেকটা নিশ্চিত। তবু মানুষের করোনা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা মনে করছেন তাদের করোনা হবে না। তাদের ধারণা, সবখানে করোনা থাকলেও গ্রামে করোনা নেই। জ্বর-সর্দি যা হয়, এগুলো সবসময়ই হয়ে আসছে। এখন করোনা আছে, তাই এগুলোকে করোনা বলে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্বর-সর্দি হলেই যদি কেউ করোনা মনে করে, তাহলে সেটা তার ব্যাপার। যার মৃত্যু যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হবে। এটা করোনাতেই হোক আর জ্বর-সর্দিতেই হোক। করোনা বলে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। করোনা নিয়েই সবাইকে চলতে হবে- এমন ধারণা পোষণ করছেন অধিকাংশ মানুষ।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একজন জানিয়েছেন, তার দুই শিশুপুত্র ও চাচা কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। পরে পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে দুই পুত্রের জ্বর ভালো হয়েছে। চাচার জ্বরও কয়েকদিন পর সেরে গেছে। কিন্তু তাদের পরিবারের এখন আরও ২/৩ জন জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন।

এ অবস্থা প্রায় সব বাড়িতে। তবে অনেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগলেও করোনার নমুনা পরীক্ষায় সবার অনীহা থেকেই যাচ্ছে। সামাজিক তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভয়ে কেউ করোনা পরীক্ষা করতে হাসপাতালে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোমিও চিকিৎসক জানান, সম্প্রতি তিনি করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। করোনার যেসব উপসর্গ সাধারণ রোগীদের মাঝে দেখা দেয়, তার সবকটিই তার মধ্যে ছিল। করোনার নমুনা পরীক্ষা করলে তিনি নিশ্চিত করোনা পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হতেন। নিজে চিকিৎসক হওয়ায় উপসর্গ বুঝে তিনি ওষুধ খেয়েছেন। তাই উপসর্গগুলো কেটে গেছে। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ, স্বাভাবিক আছেন বলে জানিয়েছেন।

সাচনা বাজারের পল্লী চিকিৎসক মোকাররম হোসেন বলেন, আমাদের কাছে করোনার উপসর্গ বয়ে বেড়াচ্ছেন এ ধরনের অনেক রোগী আসেন। যাদের সমস্যা কম তাদেরকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে দেওয়া হয়। আর যাদের সমস্যা বেশি মনে হয়, তাদেরকে জামালগঞ্জ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য। তবে তারা হাসপাতালে যান কি না সেটা তো তাদের ব্যাপার।

এ বিষয়ে ওষুধ ব্যবসায়ী সমরেন্দ্র আচার্য শম্ভু বলেন, এই এলাকায় শত শত মানুষ আছেন যাদের নমুনা পরীক্ষা করলেই নিশ্চিত করোনা শনাক্ত হবে। এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে দুই-একজন সম্ভাব্য করোনা রোগী নেই। কিন্তু কেউ করোনা পরীক্ষা করতে রাজি নন। কারণ কারো দেহে করোনা শনাক্ত হলে তাকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে যায়। করোনা বয়ে বেড়ানো মানুষটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে তাকে সমাজ থেকেই প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এ ভয়ে কেউ হাসপাতালে যেতে চান না।

সাচনা বাজারে প্রতিদিন পর্যাপ্ত রোগী দেখেন এমন একজন পল্লী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার কাছে প্রতিদিন অনেক রোগী আসেন। যাদের প্রতি ১০ জনে অন্তত ২/৩ জন নিশ্চিত করোনায় আক্রান্ত বলে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু কেউই করোনা পরীক্ষা করতে হাসপাতালে যেতে রাজি নন। তাই বাধ্য হয়ে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। এখন পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে জ্বর-সর্দির চিকিৎসায় প্রথমে যেটা প্রয়োজন, সেই প্যারাসিটামল বাজারে নেই।

জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল বলেন, যারা অসুস্থ হয়ে প্রাইভেট চেম্বারে আসেন তাদের অন্তত ৫০ ভাগ রোগীর মাঝে করোনার উপসর্গ রয়েছে। প্রাইভেট ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পর একটু ইমপ্রুভ হলেই তারা আর করোনা পরীক্ষা করেন না। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শও নেন না। এভাবে একজন থেকে আরেকজন সংক্রমিত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা থেকে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ একেবারেই উদাসীন।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঈন উদ্দিন আলমগীর বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে হলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেই সচেতন হতে হবে। করোনা মোকাবেলায় সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতাই পারে আমাদের করোনামুক্ত রাখতে। যে কারও মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। করোনা রোগীদের সেবা দিতে আমরা সর্বক্ষণ প্রস্তুত রয়েছি।


বিআর/আরআর-০৩