পল্লী বিদ্যুতের জ্বালায় অতিষ্ঠ গ্রাহকরা

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


আগস্ট ০২, ২০২১
০৯:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০২, ২০২১
০৯:৪৫ অপরাহ্ন



পল্লী বিদ্যুতের জ্বালায় অতিষ্ঠ গ্রাহকরা
বিদ্যুৎহীন অধিকাংশ সময়, দায়িত্বহীনতার অভিযোগ

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় অতিষ্ঠ মানুষ। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় অর্ধেক সময় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একদিকে ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়া, অন্যদিকে ট্রান্সফরমার, লাইন ও খুঁটির যে কোনো সমস্যা উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের চরম গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগের সমস্যায় পড়ে অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন দিলে তা সমাধানে তাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া বাড়তি বিল আদায়ের অভিযোগ তো আছেই। এ অবস্থায় সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিদ্যুতের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে উপজেলার অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। এ অবস্থা প্রায় নিয়মিত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানকার দায়িত্বশীলদের চরম দায়িত্বহীনতা ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগানকে কলঙ্কিত করছে। রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েও যদি সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়, তাহলে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কী লাভ? একদিকে বিদ্যুৎ থাকে না, আরেকদিকে প্রায় জায়গাতেই ট্রান্সফরমারের সমস্যা। প্রায় গ্রামেই ট্রান্সফরমারের ব্যারেল পড়ে যায় কিংবা কাটআউট নষ্টসহ নানা সমস্যা লেগেই থাকে। সাধারণ মানুষের অভিযোগের পরও এগুলোর স্থায়ী সমাধানে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।

সাচনা বাজার ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের বিমল চন্দ্র দাস জানান, পল্লী বিদ্যুতে অতিষ্ঠ তারা। এমনিতেই বিদ্যুৎ থাকে না দিনের অর্ধেক সময়। এর মাঝে গ্রামের উত্তর মাথার লোকেশ দাসের বাড়িতে যে ট্রান্সফরমার আছে, তার একটি যন্ত্র কয়দিন পর পর বিকল হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যোগাযোগ করতে করতে যাও ঠিক হয়, এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবার একই সমস্যায় পড়তে হয় তাদেরকে। এর জন্য লাইনম্যানরা অফিসে গিয়ে বার বার নষ্ট হওয়া কাটআউটটি পরিবর্তন করে নতুন কাটআউট লাগানোর কথা বলতে বলে। সে অনুযায়ী অফিসে গিয়ে কাটআউটের ব্যাপারে অনুরোধ করলেও এখন পর্যন্ত সেটি লাগানোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের উত্তর কামলাবাজ গ্রামের শাহজাহান সিরাজ বলেন, গত বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টায় খাবার খেতে বসতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে ঘন্টা দুয়েক পর। এর আগে সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের পর পর বিদ্যুৎ গিয়ে আসে প্রায় ঘন্টাখানেক পর। ওইদিন রাতে ঘুমানোর পর বিদ্যুৎ আর গেছে কি না বলতে পারি না। তবে পরদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা প্রায় পৌনে ১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুতের এই ভেল্কিবাজি আর ভালো লাগছে না। এ রকম হলে তো কুপি বাতিই ভালো ছিল।

সাচনা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সুনির্মল হালদার জানিয়েছেন, দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। বাকি সময় যতটুকু থাকে, তাতেও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় গ্রাহকদের। গত মাসখানেক আগে বিদ্যুতের প্রধান খুঁটি থেকে আমার দোকানে আসা লাইনে সমস্যা দেখা দেয়। এতে দোকানে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ অফিসে চার-পাঁচদিন যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে ঘনিষ্ঠ একজনকে দিয়ে ফোন দেই। তিনি কড়া ভাষায় কিছু কথা বললে পরদিন সকালে এসে লাইনম্যানরা সমস্যার সমাধান করে দিয়ে যান।

সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (৪ নম্বর) এলাকা পরিচালক ও সাচনা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, জামালগঞ্জ হাওরবেষ্টিত অনেক বড় একটি উপজেলা। এখানে যে লোকবল আছে তা দিয়ে পুরো উপজেলা সামলানো সম্ভব হয় না। তাই বৈদ্যুতিক গোলযোগ লেগেই থাকে। আমি সুনামগঞ্জে সমিতির মাসিক সভায় সমস্যা সমাধানের কথা উপস্থাপন করেছি। জামালগঞ্জকে জোনাল অফিসের আওতায় এনে সাচনা বাজারে একটি সাব-স্টেশন করার দাবিও জানিয়েছি। এগুলো করলে হয়তো সমস্যা কিছুটা কমে আসবে।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জিএম সুদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, জামালগঞ্জের বিশাল হাওর এলাকায় বিদ্যুতায়ন হয়েছে। সেখানে গ্রাহক হয়ে গেছে ৪২ হাজার। ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে একদিকে নেত্রকোণা, আরেকদিকে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর। রাতে কোনো এলাকা থেকে অভিযোগ এলে নৌকা পাওয়াও দুরূহ হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা কঠিন হওয়ার কারণে অনেক সময় আমরাও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারি না। জামালগঞ্জের সাচনা একটি বিশাল বাজার। আমরা সেখানে একটি বড় ধরনের জোনাল অফিস করার প্রস্তাব দিয়েছি। জোনাল অফিস হলে এসব সমস্যা থাকবে না।


বিআর/আরআর-০১