বড়লেখায় স্বেচ্ছাশ্রমে দৃশ্যমান হলো আপনজনের কবর

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


আগস্ট ১০, ২০২১
০৬:০৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১০, ২০২১
০৬:০৬ অপরাহ্ন



বড়লেখায় স্বেচ্ছাশ্রমে দৃশ্যমান হলো আপনজনের কবর

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কলাজুরা গ্রামের দুটি গোরস্থানে ছিল নানা প্রজাতির গাছপালা। গাছগুলো মেলেছিল ডালপালা। নিচে বেড়ে উঠেছিল বুনো ঝোপঝাড়। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। এতে ঝোপঝাড়ের নিচে আড়াল হয়ে গিয়েছিল অনেক কবর। জিয়ারত করতে আসা অনেকেই দেখতে পারতেন না আপনজনের কবর। এছাড়া গোরস্থানের ভেতরে কারও লাশ দাফন করতে হলে আগে ঝোপঝাড় কাটতে হতো। এতে একটু ঝামেলায় পড়তে হতো স্থানীয়দের। তবে এখন গোরস্থান দুটিতে জিয়ারত করতে এলে দূর থেকেও পুরাতন কবরগুলো দেখা যাচ্ছে। কারও লাশ গোরস্থানের ভেতরে দাফনে ঝামেলা পোহাতে হবে না স্থানীয়দের। এখন থেকে দাফন করা যাবে সহজেই।

এই সুযোগটা করে দিয়েছে কলাজুরা গ্রামের একদল তরুণ। তারা দুটি গোরস্থানে বেড়ে ওঠা গাছের ডালপালা আর ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করেছেন। ইতোমধ্যে তারা কলাজুরা বাজারের পাশের সার্বজনীন গোরস্থানটি পরিষ্কার করে ফেলেছেন। গতকাল সোমবার সকালে একই এলাকার হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের আরেকটি সার্বজনীন গোরস্থান তারা পরিষ্কার করেছেন। এতে ঝোপঝাড়ের আড়ালে থাকা অনেক পুরাতন কবর বেরিয়ে এসেছে।

এই তরুণরা শুধু এলাকার গোরস্থান দুটি পরিষ্কারই করেননি, এর আগে তারা কলাজুরা বাজার থেকে বাংলা নার্সারি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার দুইধারের ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করেছেন। পাশাপাশি কলাজুরা বাজারে যত্রতত্র ফেলা ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করেছেন। এতে এলাকার দৃশ্য অনেকটা বদলে গেছে। এছাড়া করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকার মসজিদগুলোতে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন এই তরুণরা। পাশাপাশি কলাজুরা গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছেন তারা।

করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তরুণরা যখন মুঠোফোনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, তখন বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের এই তরুণরা প্রায়ই এলাকার নানা জনকল্যাণ মূলক কাজ করছেন। তারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’ নামক সংগঠনের সদস্য।

সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কলাজুরা গ্রামে বাজারের পাশের প্রায় ৯০ শতক জায়গাজুড়ে একটি সার্বজনীন গোরস্থান রয়েছে। একই এলাকার হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ৯০ শতক জায়গাজুড়ে আরেকটি সার্বজনীন গোরস্থান রয়েছে। এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থান দুটিতে কবর দেওয়া হয়। গোরস্থান দুটিতে রয়েছে এলাকার শত শত মানুষের কবর। এতে রয়েছে নানা জাতের গাছপালা। দীর্ঘদিন ধরে গোরস্থান দুটিতে বেড়ে ওঠা গাছের ডালপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়নি। এতে ঝোপঝাড়ের নিচে আড়াল হয়ে যায় অনেক কবর। জিয়ারত করতে আসা অনেকেই ঝোপঝাড়ের কারণে দেখতে পারতেন না তাদের আপনজনের কবর। এছাড়া ঝোপঝাড়ের কারণে গোরস্থানের ভেতরে কারও লাশ দাফন করতে গেলে আগে ঝোপঝাড় কাটতে হতো। কলাজুরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’ এর সদস্যরা গোরস্থান দুটি স্বেচ্ছায় পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন। গত শনিবার থেকে সংগঠনের প্রায় ৫০ জন সদস্য গোরস্থান দুটির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরু করেন। রবিবার তারা কলাজুরা গ্রামে বাজারের পাশের সার্বজনীন গোরস্থান পরিষ্কারের কাজ শেষ করেছেন। গতকাল সোমবার একই এলাকার হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের আরেকটি সার্বজনীন গোরস্থান তারা পরিষ্কার করেছেন।

সংগঠনের সভাপতি রিফাত বিন মুহিত ও সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আজীর বলেন, কয়েক যুগ থেকে এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থান দুটিতে দাফন করা হয়। একটি গোরস্থান কলাজুরা বাজারের পাশে। অপরটি একটি বিদ্যালয়ের পাশে। কিন্তু গাছের ডালপালা আর ঝোপঝাড়ের কারণে গোরস্থানের অনেক পুরাতন কবর দেখা যায় না। এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থান দুটির যে জায়গায় দাফন করা হয় কেবল সেই জায়গাটুকু পরিষ্কার করা হয়। ঝোপ-ঝাড়ের কারণে ভেতরের দিকে কাউকে দাফন করা হয় না। কেউ সেগুলো পরিষ্কার করেনি। তাই আমরা গোরস্থান দুটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি এবং গোরস্থান দুটি পরিষ্কার করেছি।

এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, হাজী আপ্তাব মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সার্বজনীন গোরস্থানটিতে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি এলাকার অনেক মানুষের কবর রয়েছে। এটি অনেক পুরাতন গোরস্থান। দীর্ঘদিন ধরে গোরস্থানটির ঝোপঝাড় পরিষ্কার হয়নি। এতে অনেক পুরাতন কবরগুলো ঝোপের আড়ালে ছিল। এছাড়া এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থানটির যে জায়গায় দাফন করা হয়, সেই জায়গাটুকু পরিষ্কার করা হয়। গোরস্থানের ভেতরে কাউকে দাফন করতে হলে আগে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হয়। এটি একটা ঝামেলা। তবে এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’ এর সদস্যরা দুটি গোরস্থান পরিষ্কার করেছেন। এতে ঝোপঝাড়ের আড়ালে থাকা অনেক পুরাতন কবর বের হয়েছে। এগুলো এখন দেখা যাচ্ছে। এখন এলাকার কেউ মারা গেলে গোরস্থানের ভেতরে দাফন করা সহজ হবে।

মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সদস্য আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’ এর সদস্যরা কখনও এলাকার রাস্তা পরিষ্কার করেছেন, কখনও বাজারে ফেলা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন। গত কয়েকদিনে তারা এলাকার দুটি সার্বজনীন গোরস্থানের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেছেন। করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় তরুণরা মুঠোফোনে সময় কাটাচ্ছে। সেখানে ‘আলোর পথের যাত্রী পূর্ব হাতলিয়া (কলাজুরা)’ এর সদস্যরা এলাকায় নানা সমাজসেবামূলক কাজ করছে। তাদের কাজগুলো সত্যি প্রশংসনীয়।


এজে/আরআর-০২