সুরমার ভাঙনে আতঙ্কে ৫ শতাধিক পরিবার

সোহেল তালুকদার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ


আগস্ট ১১, ২০২১
০৫:০৯ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১১, ২০২১
০৫:০৯ অপরাহ্ন



সুরমার ভাঙনে আতঙ্কে ৫ শতাধিক পরিবার

ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ।

পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির প্রভাবে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি। এতে করে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। এ ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ। আশপাশের ৩টি গ্রামের অন্ত ৫ শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের কবলে পড়ার মুখে। অনেকের বসতবাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বর্তমানে সুরমা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই এলাকার ৫ শতাধিক পরিবারের কয়েক সহস্রাধিক মানুষ। সুরমা নদীর ভাঙনকবলিত অনেক মানুষ কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারকে দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের ধনপুর সর্দারপুর ও আমরিয়া গ্রামের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় সুরমা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙনের কবলে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ধনপুর সর্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ও নতুন ভবন। বিদ্যালয়টি ১৯৩৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড পাকা ভবনের অর্ধেক ও বিদ্যালয়ের মাঠের একটি অংশ স্রোতস্বিনী সুরমা নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের দুইপাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা বসতবাড়িও ভাঙনের কবলে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা জয়নাল মিয়া, জসিম উদ্দিন, সাদু আলী, মহর উদ্দিন, জুনা বেগম ও দিলা হোসেনের বসতবাড়িসহ অনেক জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।

তারা বলেন, আমাদের অনেক জমি ছিল, ঘরবাড়ি ছিল। ভাঙনের কবলে পড়ে আমাদের আগের ঘরবাড়ি ও জমি অনেক আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  এখন শুধুমাত্র মাথা গোঁজার জায়গাটুকু বাকি রয়েছে। সেখানেই প্রতিটি রাত নিদ্রাহীনভাবে কাটাচ্ছি আমরা। কখন যে এই বাড়িঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় সেই ভয়ে আছি। আর আমাদের এই আশ্রয়টুকু বিলীন হয়ে গেলে পথে নামতে হবে। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। আমাদের বসতবাড়ি রক্ষায় কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই। পাশের বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। সরকার ইচ্ছা করলে সবই পারে। নদীতে এখন প্রবল স্রোত, যে কোনো সময় আমাদের বসতবাড়িগুলো ভেঙে যাবে। এখন আর রাতে ঘুম আসে না। কবে সরকার আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাবে?

ধনপুর গ্রামের নারী জুনা বেগম বলেন, স্বামীর বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে কোথায় গিয়ে থাকব? ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না। সরকার যদি নদীভাঙন আটকায়, তাহলে আমাদের জান-মাল বেঁচে যায়। বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে আমরা কিভাবে বাঁচব? আমাদের কান্নায় কারও কিছু আসে যায় না।

এলাকাবাসী জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে শিগগিরই গ্রামের ৫ শতাধিক মানুষের বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। 

শিমুলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জিতু বলেন, ধনপুর সর্দারপুর ও আমরিয়ার একটি অংশ সুরমা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে।  ধনপুর সর্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে স্থানান্তরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নদীভাঙন কবলিত পরিবারের ভিটেমাটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করেছি এবং নদীভাঙনের বিষয়টি অবগত করেছি। 

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। শিগগির নদীভাঙনের এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সামছুদ্দোহা বলেন, বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরেজমিনে শিমুলবাক ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোর সুরমা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


এসটি/আরআর-০১