আসেনি নিবন্ধন কার্ড, ভেঙে যাবে তানিয়ার স্বপ্ন?

বড়লেখা প্রতিনিধি


আগস্ট ১৩, ২০২১
০৭:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৩, ২০২১
০৭:০৪ অপরাহ্ন



আসেনি নিবন্ধন কার্ড, ভেঙে যাবে তানিয়ার স্বপ্ন?

হোসনেয়ারা খানম তানিয়ার পরিবার এমনিতেই দরিদ্র। উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন নিয়েও দরদ্রিতার সঙ্গে লড়াই করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অভাবের কারণে মাঝপথে যাতে লেখাপড়া বন্ধ না হয়, সেজন্য একটি চাকরিও শুরু করেছিলেন। কিন্ত সেই তানিয়ার উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন এখন ভেঙে যাওয়ার পথে।

তানিয়া মৌলভীবাজারের বড়লেখার নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (অনার্স ১ম বর্ষ) বিভাগের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের (অনার্স ১ম বর্ষ) শিক্ষার্থীদের অটোপাসের ফলাফল বেরিয়েছে। কিন্তু ওই তালিকায় নাম নেই মেধাবী শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা খানম তানিয়ার। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।

বিষয়টির সমাধান চেয়ে সম্প্রতি বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন হোসনেয়ারা খানম তানিয়া। 

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মেধাবী এ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন মাঝপথে থেমে যাওয়ার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষের না কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের? তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তানিয়ার নিবন্ধন না হওয়ার কারণে অটোপাসের ফলাফলের তালিকায় আসেনি তানিয়ার নাম। 

জানা গেছে, হোসনেয়ারা খানম তানিয়ার বাড়ি বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে। দরিদ্র বাবার সংসারে লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য একটি বেসরকারি সংস্থার প্রকল্পের মাধ্যমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন তানিয়া। সেখানে তার নিয়মিত বেতনও হয় না। এরপরও কষ্ট করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বড়লেখার নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হন। ওই শিক্ষাবর্ষে একই বিষয়ে তানিয়াসহ ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি নিশ্চায়ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা প্রকাশ করে। তার নিশ্চায়ন তালিকার রোল নম্বর ৫৩৪৯১৪৬। সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজে গিয়ে যথারীতি ক্লাস করেছেন তিনি। চলতি বছরের মার্চে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে তানিয়া জানতে পারেন তিনি ছাড়া বাকি সকল (৪৪ জন) শিক্ষার্থীর নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) কার্ড এসেছে। ফরম পূরণের শেষ দিন ঘনিয়ে এলে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দেন তানিয়া। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। 

হোসনেয়ারা খানম তানিয়া অভিযোগ করে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ফি দিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য একটি চাকরিও ধরেছি। তারপরও নিয়মিত ক্লাস করেছি। ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় সবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এলেও অদৃশ্য কারণে আমারটা আসেনি। অন্তত ৩০ বার কলেজের বিভিন্নজনের কাছে ধরনা দিয়েছি। সবাই শুধু সমাধানের আশ্বাসই দিয়েছেন। পরে বলেন, আমি না কি কলেজের ছাত্রীই নই। সহপাঠীরা অটোপাস করে এখন দ্বিতীয় বর্ষে। আমার উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন কী এখানেই শেষ হয়ে যাবে? 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম হেলাল উদ্দিন বলেন, ঘটনাটা পূর্ববর্তী অধ্যক্ষের সময়কালের। কলেজ থেকে ৪৫ জনের তালিকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ৪৪ জনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড আসে। একজনের আসেনি। এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবরে তাৎক্ষণিক চিঠি পাঠানো হলেও রেসপন্স করা হয়নি। ইউএনও মহোদয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় শিক্ষার্থীর অভিভাবককে নিয়ে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। কলেজের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীর অভিভাবককে শিগগির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা খানম তানিয়ার লিখিত আবেদন পেয়েছি। শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন না হওয়া ও ফলাফল না আসার কারণ জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীর অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না হয়। এতে শিক্ষার্থীকে কোনো ধরনের অতিরিক্ত ব্যয় যেন বহন করতে না হয়, সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলা হয়েছে।


এজে/আরআর-০৪