শোক দিবসে ইউপি কার্যালয়ে উঠেনি পতাকা, লাগেনি ব্যানার

জামালগঞ্জ প্রতিনিধি


আগস্ট ১৫, ২০২১
০৯:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৫, ২০২১
০৯:১৪ অপরাহ্ন



শোক দিবসে ইউপি কার্যালয়ে উঠেনি পতাকা, লাগেনি ব্যানার

শোকের মাস আগস্ট এবং জাতীয় শোক দিবসে ড্রপডাউন ব্যানার ও পতাকা উত্তোলন না করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব। রবিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণসহ শোকের মাস আগস্টের শুরু থেকেই ড্রপডাউন ব্যানার সাঁটানোর নির্দেশনা থাকলেও জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নে তা হয়নি। এতে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করার অভিযোগ উঠেছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদারের এই ধৃষ্টতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের অন্তরে আঘাত করেছে বলে মনে করছেন এলাকার সুধীজন।

জানা যায়, গত ১৮ জুলাই জঃশঃউঃ/জাঃবাঃকঃ/বিবিধ-০১/২০২১/৭৩৬ নম্বর স্মারকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে কাজ করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সংযুক্ত উপ-সচিব পঙ্কজ ঘোষ স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ১ আগস্ট থেকে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে ড্রপডাউন ব্যানার সাঁটানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ২৯ জুলাই ৪৬.৪৬.৯০০০.০১১.০৫.০০৪.২০.৭৩০ স্মারকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার মো. সম্রাট হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে ড্রপডাউন ব্যানার টানাতে বলা হয়। কিন্তু শোকের মাস আগস্টের শুরু থেকেই সরকারি সে নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ। এর পাশাপাশি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার ও ইউপি সচিব অশেষ কুমার তালুকদার। এ নিয়ে জামালগঞ্জে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

রবিবার সকাল পৌনে ১১টায় জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় শোক দিবসেও ব্যানার সাঁটানো দূরের কথা, জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করেনি স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠান। পরিষদের সামনে দণ্ডায়মান লৌহদণ্ডটি পতাকা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। কার্যালয়ের কোথাও কোনো ব্যানার চোখে পড়েনি। এমনকি বেলা প্রায় ১১টা বাজলেও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে কাউকে দেখা যায়নি।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক এম আল আমিন বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কিত দিন। এ দিনটিতে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোকের এ দিনটি আসলেই বাঙালি জাতি শোকে কাতর হয়ে পড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, প্রশাসনের সন্নিকটে অবস্থিত সদর ইউনিয়ন পরিষদে টানানো হয়নি জাতীয় পতাকা ও ব্যানার। এর চেয়ে লজ্জা আর কী হতে পারে? এতে মুক্তিযুদ্ধসহ বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে বলে আমি মনে করছি।

উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. আলী আমজাদ বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় জীবনে একটি বেদনাবিধূর দিন এবং জাতীয় শোক দিবস। শোকাবহ এই দিনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ও শোক ব্যানার টানানোর কথা। কিন্তু জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেও সরকারি নির্দেশনা পালন করেনি। উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৃতপক্ষেই স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি ইচ্ছা করেই পতাকা-ব্যানার কিছুই উত্তোলন করেননি। আমি স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে এই স্পর্ধা মেনে নিতে পারছি না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কলমদর বলেন, আজ ১৫ আগস্ট। এই দিনে সারা দেশের মানুষ শোকে আচ্ছন্ন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ব্যানার ও জাতীয় পতাকা টানানো হয়নি। এই চেয়ারম্যানের দাদা আবুল মনসুর (লাল মিয়া) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনীর অনুমোদিত দালাল ছিল। এজন্য তারা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পতাকাকে অসম্মান করে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম বলেন, আসলে ওই ইউপি চেয়ারম্যান স্বাধীনতার পক্ষের লোক নয়। সে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনাবিরোধী পরিবারের সন্তান। তার বাবা এবং দাদা দুজনেই কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী। তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে আর বেশি কিছু আশা করা যায় না।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অশেষ কুমার তালুকদার বলেন, সকাল ৯টায় পতাকা টানানো হয়েছে, ব্যানারও টানানো হয়েছে। বাতাস থাকায় ব্যানারটি ভবনের উপরে উঠে গেছে। আর পতাকা বৃষ্টির কারণে গ্রাম পুলিশ খুলে ফেলেছে। বৃষ্টি কমার পরপরই আবার লাগানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার বলেন, আমি আসলে এলাকায় ছিলাম না। আমার শিশুসন্তানের চিকিৎসা জন্য সিলেটে ছিলাম। আমি সচিবকে বলেছিলাম ইউপি সদস্যদের নিয়ে শোক দিবসের কার্যক্রম ঠিকঠাকভাবে এগিয়ে নিতে। এলাকায় না থাকায় এই গ্যাপটা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, এ বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। আমাদের পতাকা পরিদর্শনের যে উপ-কমিটি আছে, তাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিআর/আরআর-১২