বড়লেখায় অবহেলিত চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালেন তারা

বড়লেখা প্রতিনিধি


আগস্ট ১৬, ২০২১
০৭:৫৯ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৬, ২০২১
০৭:৫৯ অপরাহ্ন



বড়লেখায় অবহেলিত চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালেন তারা

করোনাভাইরাস সম্পর্কে অধিকাংশ চা শ্রমিক সচেতন নন। সচেতনতার অভাবে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার টিকা নিতেও তাদের মধ্যে একধরনের ভয় ছিল। এ কারণে তারা টিকাও নেননি। অবহেলিত এই চা শ্রমিকদের সচেতনতায় কেউ কখনও এগিয়েও আসেনি। 

তবে এবার চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের সামাজিক সংগঠন কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। তারা চা শ্রমিকদের করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের করোনার টিকা নিতে তারা উৎসাহ দিচ্ছেন।

সোমবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে তারা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ের লক্ষীছড়া চা-বাগানে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাদের উৎসাহে চা শ্রমিকদের মাঝে টিকার জন্য নিবন্ধনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাগানের প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। 

জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলায় বেশ কয়েকটি চা-বাগান রয়েছে। এসব বাগানের বেশিরভাগ চা শ্রমিক নিরক্ষর। করোনাভাইরাস সম্পর্কে তারা খুব একটা সচেতন নন। এ কারণে তারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সচেতনতার অভাবে অনেকে এখনও টিকা নেননি। এ অবস্থায় তাদের সচেতন করতে এগিয়ে এসেছে উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর  ইউনিয়নের সামাজিক সংগঠন কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। এই সংগঠনের সদস্যরা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ের লক্ষীছড়া চা-বাগানে গিয়ে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে চা শ্রমিকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের করোনার টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। টিকার নিবন্ধনও করে দিচ্ছেন তারা।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা লক্ষীছড়া চা-বাগানের মন্দিরের সামনে কম্পিউটার নিয়ে বসে করোনার টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছেন। তাদের ঘিরে বাগানের চা শ্রমিকরা দাঁড়িয়ে আছেন। তারা করোনার টিকার নিবন্ধন করতে এসেছেন। এ সময় পরিষদের সদস্যরা চা শ্রমিকদের টিকার নিবন্ধন করে কার্ড প্রিন্ট করে দিচ্ছিলেন। পাশাপাশি তাদের মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। 

বাগানের চা শ্রমিক সুনামনি ভৌমিক, রিতা, লক্ষী কুর্মী ও পরিমল গঞ্জু বলেন, আমরা লেখাপড়া জানি না। করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানতাম না। কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা বাগানে এসে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

তারা বলেন, আমরা করোনার টিকাও নেইনি। আমাদের মাঝে একধরনের ভয় ছিল। আর টিকা নিতে হলে কীভাবে নিবন্ধন করতে হয় তাও আমাদের জানা ছিল না। কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা আমাদের টিকা নিতে উৎসাহ দিয়েছেন। টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছেন। আর কেউ আমাদের কথা ভাবেনি। করোনার বিষয়ে সচেতন করতে এগিয়ে আসেনি। তারা যে আমাদের কথা ভেবেছেন, আমাদের করোনা থেকে মুক্ত থাকতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন, টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছেন, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। 

লক্ষীছড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রাজেন্দ্র ভৌমিক বলেন, বাগানের মানুষ এখনও করোনার টিকা নেয়নি। আর টিকা কীভাবে নেবে, টিকার নিবন্ধন তো তারা এখনও করেনি। টিকার নিবন্ধন করতে কম্পিউটারে গিয়ে আবেদন করতে হয়। এতে যে টাকা লাগে সেটাও অনেক শ্রমিকের নেই। তাই কেউ টিকার নিবন্ধন করেনি। টিকাও নিতে পারেনি। এজন্য অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা বাগানে এসে আমাদের করোনা সম্পর্কে সচেতন করেছেন। টিকা নিতে উৎসাহ দিয়েছেন। টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী ইমন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাাহ আল সাজু বলেন, চা শ্রমিকরা এমনিতেই অবহেলিত। আর তাদের বেশিরভাগই নিরক্ষর। তাই তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাদের কথা কেউ তেমন একটা ভাবে না। আর তারা করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন নন বলে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই আমরা মানবিক কারণে তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। করোনা থেকে মুক্ত থাকতে করণীয় সম্পর্কে তাদের সচেতন করেছি। তাদের টিকা নিতে উৎসাহ দিচ্ছি। টিকার নিবন্ধন করে তার কার্ড প্রিন্ট করে দিচ্ছি। আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে। 

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে চা-বাগানের শ্রমিকরা সচেতন নয়। তাদের সচেতন করতে সামাজিক সংগঠন কাঠালতলী সমাজ কল্যাণ পরিষদ একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমি দেখেছি, তাদের উৎসাহে চা শ্রমিকদের মাঝে টিকার নিবন্ধনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। 


এজে/আরআর-০৮